খুলনায় এমপিপুত্রের নেতৃত্বে ইটভাটা দখলের চেষ্টা!

খুলনা-৬ আসনে আওয়ামী লীগদলীয় সংসদ সদস্য (এমপি) শেখ মো. নূরুল হক ও তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে পাইকগাছা উপজেলার একটি ইটভাটা দখলচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে।
এই ঘটনায় আজ রোববার এমপিপুত্র মনিরুল হকসহ দেড় শতাধিক ব্যক্তিকে আসামি করে পাইকগাছা থানায় মামলা করা হয়েছে। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পাইকগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আশরাফ হোসেন।
এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, পাইকগাছা উপজেলার চাঁদখালী ইউনিয়নের সাহাপাড়া (হাচিমপুর) গ্রামের এস এ কে ব্রিকস নামের ইটভাটার মালিকানা নিয়ে বিরোধ রয়েছে। এ নিয়ে আদালতে মামলাও রয়েছে। স্থানীয় এমপি অ্যাডভোকেট শেখ মো. নুরুল হক ও তাঁর ছেলে মনিরুল হকের নেতৃত্বে গতকাল শনিবার শতাধিক মানুষ ওই ইটভাটায় হামলে পড়ে। হামলাকারীরা ইটভাটার মালিক দাবিদার রুহুল আমিনের লোকজনকে বেদম মারপিট করে সেখান থেকে উচ্ছেদ করে। অন্যরা পালাতে পারলেও গড়ুইখালী ইউনিয়নের কানাখালী গ্রামের জয়দেব মণ্ডল (৪২), আমিরপুর গ্রামের মনিশংকর মণ্ডল (৩৫), চাঁদখালী ইউনিয়নের গজালিয়া গ্রামের মাসুম সরদার (৩২), মৌখালী গ্রামের মাহমুদ হাসান পরাগ (২৫), কয়রার হরিনগর গ্রামের নুরুল হুদা (৪০) ও ভান্ডারপোল গ্রামের রুহুল আমিন সানা (৪২) হামলাকারীদের হাতে ধরা পড়েন। পরে তাঁদের এমপি নুরুল হকের পাইকগাছা পৌর সদরের বাসভবনের একটি কক্ষে আটকে রাখা হয়। শনিবার সন্ধ্যায় পুলিশ তাঁদের উদ্ধার করে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠায়।
এ ঘটনায় ইটভাটার মালিক দাবিদার রুহুল আমিন খানের ব্যবস্থাপক ও হামলায় আহত জয়দেব মণ্ডল বাদী হয়ে পাইকগাছা থানায় একটি মামলা করেন। এতে এমপির ছেলে মনিরুল হককে এক নম্বর আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া আরো ২২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
আহত জয়দেব মণ্ডল সাংবাদিকদের বলেন, ‘এমপি নুরুল হক ও তাঁর ছেলে মনিরুলের নেতৃত্বে হামলা হয়েছে। এমপিকে আসামি করা হলে পুলিশ মামলা নেবে না, তাই তাঁর ছেলেকে এক নম্বর আসামি করা হয়েছে।’
জানতে চাইলে পাইকগাছা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আলমগীর কবির সাংবাদিকদের বলেন, ‘লিখিত এজাহারের ভিত্তিতে আমরা মামলা গ্রহণ করেছি। ইটভাটার মালিক দাবিদার অন্য আরেকটি পক্ষও একটি এজাহার দাখিল করেছে।’
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সাহাপাড়া (হাচিমপুর) গ্রামের রুহুল আমিন খান চরভরাটির প্রায় ১০ একর জমির ওপর ২০১১ সালে এস এ কে ব্রিকস নামের একটি ইটভাটা তৈরি করেন। তিন বছর পর ২০১৪ সালের ১০ জুলাই রুহুল আমিন খানের কাছ থেকে সালাম খান পাঁচ বছরের জন্য এটি ইজারা নেন। বিষয়টি নিয়ে রুহুল আমিন খান আদালতে মামলা করেন। তিনি দাবি করেন, অস্ত্র দেখিয়ে তাঁর কাছ থেকে এই ইটভাটার ইজারা দলিলে স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে। চলতি বছরের গত ৪ এপ্রিল রুহুল আমিন খানের পক্ষে গড়ুইখালী গ্রামের বাবু গাইন ইটভাটাটি দখল করে নেন। এদিকে সালাম খানের পক্ষ নিয়ে এমপি নুরুল হক ও তাঁর ছেলে মনিরুল হক শনিবার ইটভাটা দখল নিতে যান।
বিষয়টি নিয়ে এমপি নুরুল হকের সঙ্গে কথা বলার জন্য তাঁর মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।