সুনামগঞ্জে তিন দিনব্যাপী লোক উৎসব শেষ হচ্ছে আজ

সুনামগঞ্জের তিন কালজয়ী পুরুষ ধামাইল গানের স্রষ্টা রাধারমণ দত্ত, মরমি সাধক হাছন রাজা ও বাউলসম্রাট শাহ আবদুল করিমের স্মরণে শুরু হয়েছে তিনদিনব্যাপী লোক উৎসব। শহরের শহীদ আবুল হোসেন মিলনায়তনে আয়োজিত এ উৎসব আজ মধ্যরাতে শেষ হচ্ছে।
সুনামগঞ্জ শহরের ঐতিহ্যবাহী বালুর মাঠে এই উৎসবের আয়োজন করা হলেও প্রথম দিন কালবৈশাখীতে মূল মঞ্চ ভেঙে যায়। প্রশাসন সংগীতপ্রেমীদের কথা চিন্তা করে শহীদ আবুল হোসেন মিলনায়তনে এ উৎসব স্থানান্তর করে। উৎসবের প্রথম দিনটি উৎসর্গ করা হয় লোককবি রাধারমণ দত্ত, দ্বিতীয় দিন মরমি কবি হাছন রাজা আর তৃতীয় দিন বাউলসম্রাট শাহ আবদুল করিমকে। প্রতিদিন উৎসবস্থলে নারী, পুরুষ ও শিশুরা এসে ভিড় করছে। আর সন্ধ্যায় উপভোগ করছে গান।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা শিল্পী-বাউলরা নেচে-গেয়ে জমিয়ে রেখেছেন উৎসবস্থল। রাতভর চলছে দেশের প্রখ্যাত শিল্পীদের পাশাপাশি বাউলদের গানের আসর। সেই সাথে অনুষ্ঠানে আসা দর্শকরা মেতেছেন নৃত্যের তালে।
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ও সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় গত চার বছর ধরে সুনামগঞ্জে কালজয়ী এই মরমি সাধকদের জীবনদর্শন ও গানের চর্চা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে তিনদিনের এই উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। তবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভা ছাড়াও উৎসবে রাধারমণ দত্ত, হাছন রাজা ও শাহ আবদুল করিমের লেখা গান এবং তাঁদের জীবনদর্শন নিয়ে প্রকাশিত বই নিয়ে মেলারও আয়োজন করা হয়েছে। একই সাথে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিজ্ঞান মেলারও আয়োজন রয়েছে।
এ ধরনের উৎসবের মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম সুনামগঞ্জের কালজয়ী এসব মানুষ সম্পর্কে জানতে পারবে।
এই তিন পুরুষের জীবন ও দর্শন নিয়ে আলোচনার নিজেদের সমৃদ্ধ করা সম্ভব বলে জানান উৎসবে আসা অতিথিরা।
সকারের পক্ষ থেকে এ ধরনের আয়োজনে সহযোগিতা দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘বাংলাদেশে বাঙালিকে প্রতিষ্ঠা করতে হলে বাঙালির সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, চালচলন, মনন, মেধা যা কিছু আছে সেটাকে পুনরুদ্ধার করে পুনস্থাপন করতে হবে।’
বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সদস্য ড. মোহাম্মদ সাদিক বলেন, ‘তাঁরা তাঁদের ভাবে গান লিখেছেন। তাঁরা তাঁদের আলোতে সন্তরণ করেছেন। তাঁরা এভাবে সাম্রাজ্য রচনা করেছেন। আমরা যাঁরা এখানে আসি সেই আলো থেকে আলোকিত হওয়ার জন্য আসি।’
উৎসবে আসা দর্শকরা বলছেন, এ ধরনের অনুষ্ঠান সুনামগঞ্জের লোকসংস্কৃতিকে বিশ্বদরবারে বাংলাদেশকে পরিচিত করবে। সেই সাথে নতুন প্রজন্মকে লোকসংস্কৃতির সাথে পরিচিত করবে।