মাওলানা আবদুর রশিদ তর্কবাগীশের মৃত্যুবার্ষিকী শনিবার

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি, স্বাধীনতা সংগ্রামের রক্তসিড়ি সলঙ্গা বিদ্রোহের মহানায়ক, গণমানুষের নেতা মাওলানা আবদুর রশিদ তর্কবাগীশের ৩০তম মৃত্যুবার্ষিকী কাল শনিবার ২০ আগস্ট।
মহান এ জাতীয় নেতা ও ভাষা আন্দোলনের প্রাণপুরুষের মৃত্যুবার্ষিকী যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে পালনের জন্য বিভিন্ন সংগঠন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকালে মরহুমের সমাধিতে পুষ্পস্তর্বক অর্পণ, কবর জিয়ারত, ফাতেহা পাঠ ও দোয়া খায়ের।
সিরাজগঞ্জে মাওলানা তর্কবাগীশ গবেষণা কেন্দ্র, রায়গঞ্জের বেগম নুরুন্নাহার তর্কবাগীশ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, সলঙ্গা থানাধীন চড়িয়া মাওলানা আবদুর রশিদ তর্কবাগীশ বিজ্ঞান মাদ্রাসা, পাটধারী মাওলানা আবদুর রশিদ তর্কবাগীশ উচ্চ বিদ্যালয়, সলঙ্গা মাওলানা তর্কবাগীশ পাঠাগার, মাওলানা আবদুর রশিদ তর্কবাগীশ ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পৃথক পৃথকভাবে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে মরহুমের নিজ জেলা সিরাজগঞ্জ থেকে প্রকাশিত দৈনিক কলম সৈনিকসহ বিভিন্ন সংবাদপত্র ক্রোড়পত্রে প্রকাশ করবে। পারিবারিকভাবে নেতার পল্লী ভবনে কোরআনখানি ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
মাওলানা আবদুর রশিদ তর্কবাগীশ ১৯০০ সালের ২৭ নভেম্বর সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার সলঙ্গা থানাধীন তারুটিয়া গ্রামে এক পীর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বড় পীর আবদুল কাদের জিলানী (রহ.) ছিলেন তাঁর পূর্ব পুরুষ।
মাওলানা আবদুর রশিদ তর্কবাগীশ ছিলেন আজীবন সংগ্রামী মানুষ। ১৯২২ সালের ২৭ জানুয়ারি তাঁর নেতৃত্বে বিলেতি পণ্য বর্জন আন্দোলনে সলঙ্গা হাটে ব্রিটিশ পুলিশের গুলিতে প্রায় সাড়ে চার হাজার মানুষ শহীদ হয়। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন, ১৯৫৫ সালে ১২ আগস্ট পাকিস্তানের গণ-পরিষদে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে তিনিই প্রথম বাংলা ভাষায় বক্তব্য দেন। ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান এবং ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁর অনন্য অবদান যুগ যুগ ধরে মুক্তিকামী মুসলিম জাতিকে স্বাধিকার আদায়ের সংগ্রামে অনুপ্রাণিত করবে।
স্বাধীনতার পর মাওলানা আবদুর রশিদ তর্কবাগীশের প্রচেষ্টায় মাদ্রাসা শিক্ষা পুনরায় চালু হয়। বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি প্রথম মাদ্রাসা শিক্ষাকে আধুনিকীকরণ ও একে বিজ্ঞান সম্মত রূপ দেন। তিনি ঋণ সালিশী বোর্ড প্রবর্তন করেন। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা এবং তিনি বেতার ও টেলিভিশনে কোরআন তিলাওয়াতের নিয়ম চালু করেন। এ ছাড়া তিনি কৃষক আন্দোলন, খেলাফত আন্দোলন, তেভাগা আন্দোলনসহ দেশ ও জাতির ক্রান্তিকালে সব মুক্তির আন্দোলনে সরাসরি সামনে থেকে জাতির অধিকার আদায়ে সর্বদা সচেষ্ট থেকেছেন আজীবন। স্বীয় মেধা প্রজ্ঞা ও যুক্তি দিয়ে ইসলাম ও মুসলিম জাতি জাগরণে তিনি আমৃত্যু সংগ্রাম করে গেছেন।
এই কর্মক্লান্ত মহান সৈনিক মাওলানা আবদুর রশিদ তর্কবাগীশ ১৯৮৬ সালের ২০ আগস্ট ৮৫ বছর বয়সে ঢাকার তৎকালীন পিজি হাসপাতালে রাতের শেষ প্রহরে ইন্তেকাল করেন।