সচ্ছলতা এসেছে বাদামচাষির ঘরে

পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলায় চলতি মৌসুমে বাদামের বাম্পার ফলন হয়েছে। ভালো মাটি, অনুকূল আবহাওয়া ও গাছ রোগে আক্রান্ত না হওয়ায় বাদাম উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। সব মিলিয়ে এসব অঞ্চলে ২৭ হাজার একর জমিতে ৪৬ হাজার ৫০০ টন বাদাম উৎপাদন হবে বলে আশা করছে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ।
পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক এ বি এম মোস্তাফিজার রহমান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘চলতি বছর বাদামের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। সময়মতো বৃষ্টি হওয়ায় এ বছর এসব অঞ্চলের বাদাম পুষ্ট হয়েছে। এ ছাড়া বাদামগাছে তেমন কোনো জীবাণুর আক্রমণ ছিল না। ফলে কৃষকরা বাদামের ভালো ফলন পেয়েছেন।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলার ছোট-বড় ১২৫টি চরের ২৫ হাজার একর জমিতে বাদাম চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। অনুকূল আবহাওয়া ও বাদামের বাজারদর ভালো থাকায় কৃষকরা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় দুই হাজার একর বেশি জমিতে বাদাম চাষ করেন।
পাবনার বেড়া উপজেলার একটি স্কুলের শিক্ষক আবুল হোসেন বলেন, বাদাম চাষ করে চরাঞ্চলের অনেক কৃষক পরিবারে সচ্ছলতা এসেছে। মলিন মুখে ফুটেছে হাসি।
বেড়া উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার নাকালিয়া ও নগরবাড়ীতে গড়ে উঠেছে বাদাম বিক্রির পাইকারি মোকাম ও বাদাম কারখানা। প্রতিদিন কৃষকরা নৌকায় করে নাকালিয়া ও নগরবাড়ী মোকামে বাদাম বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ব্যবসায়ীরা বাদাম কেনার জন্য এই মোকামে আসেন। বাদাম কেনাবেচার জন্য ২০-২২টি আড়ত গড়ে উঠেছে। ব্যবসায়ীরা আড়তদারের মাধ্যমে বাদাম কেনেন। আবার কিছু কিছু বড় ব্যবসায়ী বাদাম কিনে মেশিনে খোসা ছাড়িয়ে নেন। পরে বাদামের দানা দেশের বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করেন ব্যবসায়ীরা।
চৌহালী উপজেলার মিনারদিয়া চরের কৃষক আহেদ আলী প্রামাণিক জানান, তিনি এ মৌসুমে ছয় বিঘা জমি থেকে ১৩০ মণ বাদাম তুলেছেন। রোদে শুকানোর পর পাওয়া গেছে ৮৬ মণ। অন্য ফসল আবাদের চেয়ে বাদাম আবাদে পরিশ্রম ও খরচ অনেক কম লাগে। তিনি নাকালিয়া হাটে প্রতি মণ বাদাম এক হাজার ৮০০ টাকা হিসেবে ৮৬ মণ বাদাম এক লাখ ৫৫ হাজার টাকা বিক্রি করেছেন। খরচ বাদে তাঁর নিট লাভ হয়েছে এক লাখ ২৮ হাজার ৫০০ টাকা।
ঢাকার পোস্তগোলার বাদাম ব্যবসায়ী শাহ আকবর আলী খান বলেন, ‘মান ভালো হওয়ায় এ অঞ্চলের বাদামের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। নগরবাড়ী ও নাকালিয়া হাট থেকে বাদাম কিনে আড়তদারের গুদামে রাখি। মণপ্রতি আড়তদারকে ১০ টাকা কমিশন দিয়ে থাকি। তিনিই বাদাম দেখাশোনা করেন। পরে আড়ত থেকে নৌপথে বাদাম ঢাকায় নিয়ে বিভিন্ন চানাচুর তৈরির কারখানায় সরবরাহ করি। প্রতি সপ্তাহে ৫০০ থেকে এক হাজার মণ বাদাম ঢাকায় পাঠাই।’
নগরবাড়ীর আড়তদার আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা আড়তে বাদাম কিনতে আসেন। আমি তাঁদের বাদাম কিনে দিই। পরিচিত ব্যাপারিদের বাকিতেও বাদাম দিতে হয়। বাকিতে বাদাম বিক্রি করে এ পর্যন্ত কোনো অসুবিধায় পড়িনি।’