নিখোঁজের ২৩ বছর পর দেশে ফিরলেন নারী
প্রায় ২৩ বছর আগে নিখোঁজ হয়ে ভারত থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে দেশে ফিরেছেন এক নারী। আজ শুক্রবার (২৩ জুন) দুপুরে তাঁকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেন আগরতলায় নিযুক্ত বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশন।
প্রায় ২৩ বছর আগে নিখোঁজ হয়েছিলেন ঝিনাইদহ জেলার বিশায়কহালি এলাকার খাইবার আলীর মেয়ে ফজিলা খাতুন (৫৫)। ২০০০ সালে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হওয়ার পর তাঁর কোনো সন্ধানও মিলেনি। তবে সেই দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবশেষে অবসান হলো আজ।
নিখোঁজ হয়ে ফজিলা খাতুন এই দীর্ঘকাল ভারতে ছিলেন। সেখানে তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হন। পরবর্তী সময়ে আদালেতর নির্দেশে তাঁকে ত্রিপুরার একটি মানসিক চিকিৎসা কেন্দ্রে চিকিৎসা দেওয়া হয়। চিকিৎসা শেষে সুস্থ হওয়ার পর পরিচয় শনাক্ত করে ফজিলাকে দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য উদ্যোগ নেয় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
এদিকে হারিয়ে যাওয়া ফজিলা খাতুনকে গ্রহণ করতে সীমান্তের শূন্য রেখায় উপস্থিত ছিলেন তাঁর মেয়েসহ স্বজনরা। দীর্ঘ অপেক্ষার পর মাকে ফিরে পেয়ে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন মেয়ে পিঞ্জিরা আক্তার। মেয়ের দিকে অপলক তাকিয়ে থাকেন অসুস্থ ফজিলা খাতুন। সীমান্তের শূন্য রেখায় এ সময় এক হৃদয় বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। দীর্ঘদিন পর স্বজনকে ফিরে পেয়ে আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়েন স্বজনরা। তবে অসুস্থতার কারণে ফজিলা কথা বলতে পারেননি। তিনি কীভাবে ভারতে গিয়েছিলেন তাও জানা যায়নি।
সীমান্তের শূন্য রেখায় ফজিল খাতুনের ভাইপো মো. শাহজালাল বলেন, ‘২০২২ সালের আগস্ট মাসে উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে জানতে পারি আমার ফুফু ভারতের আগরতায় মানসিক হাসপাতালে আছেন। তারপর সরকারি ভাবে যোগাযোগ করে ত্রিপুরার সহকারী হাই কমিশনার আরিফ মোহাম্মদের সহযোগিতায় ফুফুকে দেশে আনতে পেরেছি।’
মাকে ফিরে পেয়ে পিঞ্জিরা আক্তার বলেন, ‘মা যখন হারিয়ে যান তখন আমার বয়স ১২ বছর। শুনেছি মা হারিয়ে গেছেন। মাকে অনেক খোঁজাখুজি করেও পাইনি। তিনি এত দিন আমাদের কাছে মৃত ছিলেন। আজ জীবিত ফিরে পেয়ে খুব আনন্দ লাগছে।’
আগরতলায় নিযুক্ত বাংলাদেশের সহকারী হাই কমিশনার আরিফ মোহাম্মদ বলেন, ‘দীর্ঘ ২৩ বছর পর হারিয়ে যাওয়া এক মাকে তাঁর সন্তানের কাছে পৌঁছে দিয়েছি। তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন। তিনি নিজ বাড়ি থেকে হারিয়ে যান। তাঁর পরিবারের লোকজন তাঁকে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও পায়নি। কোনো এক সময় তাঁকে মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় ত্রিপুরায় পাওয়া যায়। পরে ত্রিপুরার মডার্ন সাইক্রিয়াটিক হাসপাতালে তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। ত্রিপুরা পুলিশ আমাকে তাঁর কথা বলে। আমি বাংলাদেশ সরকারের কাছে তাঁর তথ্য পাঠিয়ে নাগরিকত্ব যাচাই করে ভারত সরকারকে জানাই। ভারত সরকারের অনুমতি সাপেক্ষে আজ তাঁকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছি।’
ত্রিপুরা রাজ্য সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে আরিফ মোহাম্মদ আরও বলেন, বিষয়টি একদিকে যেমন আনন্দের। একই সঙ্গে আমাদের আরও সচেতন হতে হবে।’
এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় হাই কমিশনের প্রথম সচিব মো. রেজাউল হক চৌধুরী, মো. আল আমিন, ৪২ বিএসএফ আগরতলা আইসিপির কোম্পানি কোমান্ডার ধিবেকান দিমান, আখাউড়া ইমিগ্রেশন পুলিশের ইনচার্জ হাসান আহমেদ বুইয়া, বিজিবি আখাউড়া আইসিপির ইনচার্জ মো. শাহ আলম প্রমুখ।