একই পরিবারের পাঁচজন নিহত, যশোরের যাদবপুরে শোকের মাতম
যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার যাদবপুর গ্রামের সত্তরোর্ধ বৃদ্ধ বাবুল মুন্সী। সড়ক দুর্ঘটনায় একসঙ্গে হারিয়েছেন স্ত্রী মাহিমা বেগম (৪৮), ছোট মেয়ে সোনিয়ার জমজ ছেলে হাসান ও হোসেন, শ্যালিকা রাহিমা বেগম ও রাহিমা বেগমের মেয়ে জবাকে (৬)। তিনি এখন স্তব্ধ। কারণ, স্বজন হারানোর বেদনার পাশাপাশি শঙ্কায় ভুগছেন একই ঘটনায় গুরুতর আহত ছোট মেয়ে সোনিয়া ও সোনিয়ার মেয়ে খাদিজাকে (৫) নিয়ে। খাদিজা যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি। গুরুতর অবস্থায় সোনিয়াকে নেওয়া হয়েছে ঢাকায়।
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় যশোর-মাগুরা সড়কে বেপরোয়া গতির এক বাসের ধাক্কায় তছনছ হয়ে গেছে তার পরিবার। আজ শনিবার সকালে বাবুল মুন্সীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় হৃদয়বিদারক দৃশ্য। আত্মীয়-স্বজনসহ আশপাশের কয়েক গ্রামের মানুষ ভেঙে পড়েছে তার বাড়িতে। শোকে মুহ্যমান বাবুল মুন্সী ঠিকমতো কথা বলতে পারছেন না। কাঁপা কণ্ঠে বলেন, ‘নাতনি খাদিজার গলায় টিউমার ছিল। অপারেশনের জন্য আমার স্ত্রী, শ্যালিকা, নাতি-নাতনিরা ইজিবাইকে করে যশোর শহরে ডাক্তারের কাছে যাচ্ছিল। রাত ৮টায় অপারেশনের কথা ছিল। পথে বাসের চাপায় সব শেষ হয়ে গেছে। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।’
নিহত মাহিমা বেগমের বাবা সদর উদ্দিন কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘যারা যাবার চলে গেছে, এখন আর বিচার চেয়ে কী হবে?’
নিহত দুই জমজ সন্তান হাসান ও হোসেনের পিতা হেলাল মুন্সী বলেন, ‘রাত ৮টায় অপারেশনের কথা ছিল। যাওয়ার পথে এ দুর্ঘটনা ঘটে। আমার দুই ছেলে মারা গেছে। স্ত্রী, মেয়ে হাসপাতালে। আমি এর বিচার চাই।’
স্থানীয় জহুরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান মিন্টু বলেন, ‘আমাদের এলাকায় এর আগে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটেনি। পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। চালকদের বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোর কারণেই এভাবে প্রাণ ঝরে। সাধারণ মানুষ যাতে নিবিঘ্নে সড়কে চলাচল করতে পারে সেকারণে আমি এর বিচার চাই।’
যশোরের জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান এ দুর্ঘটনায় নিহতের দাফন ও আহতদের চিকিৎসার ব্যয় বহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
শনিবার সকাল ১১টার মধ্যেই নিহতদের নামাজে জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয়।
এদিকে এ ঘটনায় হেলাল মুন্সীর চাচা ছোটন মুন্সী এ ঘটনায় বাদী হয়ে গতকাল যশোর কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা করেছেন। মামলায় বাসের চালক ও হেলপারকে আসামি করা হয়েছে। এর আগে যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোছাইন বলেন, ‘কী কারণে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। আসমিদের ধরতে অভিযানও চালানো হচ্ছে।’
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় যশোর-মাগুরা সড়কের লেবুতলায় মাগুরামুখী একটি যাত্রীবাহী বাস ইজিবাইকের ওপর উল্টে পড়ে। এতে ওই ইজিবাইকের যাত্রী একই পরিবারের তিন শিশু ও দুই নারীসহ সাতজন নিহত হন।
এ ঘটনায় নিহত জমজ শিশুর দাদা ছোটন মুন্সী বাদী হয়ে যশোর কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। মামলায় বাসের চালক ও হেলপারকে আসামি করা হয়। এরপর থেকেই পুলিশ এ দুজনকে খুঁজতে থাকে।
যশোরের খাজুরা বাস মালিক সমিতির সভাপতি তারেক হোসেন বলেন, ‘পুলিশ সুপার ও থানার ওসির অনুরোধে তারা বাসের চালক মিজানুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। শুক্রবার রাতে তাকে পাওয়া যায়নি। শনিবার সকালে তার সঙ্গে শ্রমিক নেতাদের কথা হয়। এরপর সন্ধ্যার দিকে মিজানুর রহমান আসলে শ্রমিক নেতারা তাকে নিয়ে থানায় পুলিশের হাতে তুলে দেন।’