‘কোন নিষ্ঠুর হামার ভাইকে মারলো, তার হাতটা কাঁপলো না?’
পুলিশের গুলিতে নিহত কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক এবং রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থী আবু সাঈদের গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। বৃদ্ধ পিতা-মাতার আহাজারিতে ভারী উঠেছে পরিবেশ। সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা নেই কারো মুখে।
আজ বুধবার (১৭ জুলাই) আবু সাঈদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ছেলের মৃত্যুতে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন বাবা-মা। ভাই-বোনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে পরিবেশ।
আবু সাঈদের ছোট বোন সুমি বেগম বলেন, ‘হামাদের বাড়িত শুইতবার জায়গা নাই ভাই, হামার ভাই যখন বাড়িত আসে মাইনষের বাড়িত থাকে। কষ্ট কইরে লেখাপড়া করছে হামার ভাই। তার ফলডা পালো না ক্যা! কোন নিষ্ঠুরে হামার ভাইকে মারলো, তার হাতটা ক্যা কাঁপলো না? যে নিষ্ঠুর হামার ভাইকে মারল তার বিচার চাই।’
রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার দিনমজুর মকবুল হোসেনের ছেলে আবু সাঈদ। ৯ ভাই-বোনের মধ্যে একমাত্র আবু সাঈদ লেখাপড়া করত। লেখাপড়া শেষে ভালো চাকরি করে পরিবারের দায়িত্ব নেওয়ার স্বপ্ন ছিল সাঈদের, এমনটাই জানিয়েছে পরিবার।
আজ বুধবার (১৭ জুলাই) ভোর রাতে আবু সাঈদের মরদেহ গ্রামের বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার মদনখালি ইউনিয়নের বাবনপুর গ্রামে এসে পৌঁছায়। এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনরা। নিষ্ঠুর এ হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেছেন পরিবার, এলাকাবাসী ও সহপাঠীরা।
নিহত আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন ক্যামেরার সামনে কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। কান্না জড়ানো কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘হামার ছেলে হত্যার উচিত বিচার চাই হামি।’ এর বেশি আর কিছুই বলতে পারছেন না মকবুল হোসেন।
নিহত আবু সাঈদ রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র ছিলেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন তিনি। পরিবারের দারিদ্র্যকে জয় করে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছিলেন সাঈদ। কিন্তু, ঘাতকের বুলেট তাকে সফল হতে দেয়নি।
গতকাল মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে তাকে নৃশংসভাবে গুলি করে হত্যা করে পুলিশ। এ সময় তিনি কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন।
গতকাল রাতে সিন্ডিকেটের জরুরি সভা করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। নেওয়া হয়েছে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা।