চাঁদাবাজি-দখলদারি বন্ধ না হলে যুদ্ধ চলবে : শফিকুর রহমান
জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, দেশে যারা চাঁদাবাজি ও দখলকারী তাদের, বিনয়ের সঙ্গে বলি, এগুলো বন্ধ করেন। তবে, যদি আমাদের এই বিনয়ী অনুরোধ কেউ না মানে, তাহলে আমাদের যুদ্ধ এখনও শেষ হয়নি। সন্তানেরা স্লোগান দিচ্ছে, আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ। যুদ্ধ চলবে।
আজ শনিবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুরে রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদরাসা ময়দানে জেলা ও মহানগর জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডা. শফিকুর রহমান এসব কথা বলেন।
জামায়াতের আমির বলেন, ‘এই দেশ অনেকে শাসন করেছেন। আমাদের সন্তানেরা এত রক্ত কেন দিল? কারণ তারা চেয়েছে, এই সমাজ থেকে সব ধরনের দুঃশাসন ও দুর্নীতির কবর রচিত হোক।’
ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন, ‘রাজশাহী, যেটাকে শিক্ষার ভিলেজ বলা হয়, শিক্ষার গ্রাম। আমি আশা করি, ৫ আগস্টের পর রাজশাহীতে কোনো চাঁদাবাজি হয় না। এখানকার মানুষ ভদ্র, বিনয়ী ও সৎ। কেউ চাঁদাবাজি এখানে করে না, ঠিক না?’
এ সময় নেতাকর্মীরা ‘চাঁদাবাজি হয়’ বলে আওয়াজ তোলেন। আমির প্রশ্ন করেন, ‘এখানেও চাঁদাবাজি হয়? এখানেও ফুটপাত দখল হয়? হাটবাজার, বালুমহাল, জলমহাল, যানবাহন স্ট্যান্ড, সবগুলোতে দখলদারি হয়?’
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘তাহলে আমাদের শহীদদের রক্তের প্রতি এটা কি ভালোবাসা? এই কাজ যাঁরা করেন, বিনয়ের সঙ্গে অনুরোধ করি, এই কাজটা ছেড়ে দেন। আমাদের শহীদেরা কষ্ট পাবেন। অফিস-আদালতে ঘুষ–বাণিজ্য আছে, আবার মামলা-বাণিজ্যও অনেকে করেন। তাঁদের প্রতি আমাদের আন্তরিক অনুরোধ, ভাই, এই কাজগুলো করিয়েন না। আমাদের শহীদদের আত্মা বড় কষ্ট পাবে। আমাদের জীবন্ত সন্তানেরা যারা শহীদ হওয়ার নিয়ত করে রাস্তায় নেমেছিল, তারা কষ্ট পাবে। তাদের কষ্ট দেবেন না।’
একমাত্র কোরআনের শাসন বাংলাদেশে ইনসাফ কায়েম করতে পারে উল্লেখ করে জামায়াতের আমির বলেন, ‘চাঁদাবাজি-দখলদারির বিরুদ্ধে আমাদের যুদ্ধ চলবে। যুদ্ধ কতক্ষণ? যতক্ষণ না ইনসাফ কায়েম হয়। এই ইনসাফ দিতে পারে একমাত্র আল কোরআন। এই কোরআনের শাসন দিয়ে আমরা বাংলাদেশ গড়তে চাই। আমরা বৈষম্যহীন, দুর্নীতিমুক্ত, চাঁদাবাজমুক্ত, ন্যায়-ইনসাফের মাধ্যমেই বাংলাদেশ গড়তে চাই। এ জন্য আমাদের লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। আমরা ত্যাগ অনেক করেছি। আরও ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। জীবন খুব ছোট, কাজ অনেক বড়। বিশ্রামের কোনো সময় নেই।’
জামায়াতের আমির আরও বলেন, ‘আমরা আল্লাহর শক্তিতে বলীয়ান একটি জাতি গঠন করতে চাই। সে জাতি হবে সাহসী জাতি, বীরের জাতি। সে জাতি আল্লাহ ছাড়া কারও কাছে মাথা নত করবে না। এটা করেনি বলেই ১৫টি বছর আলেম-ওলামাদের ওপর বিগত সরকার তাণ্ডব চালিয়েছে। জামায়াতের দুজন আমিরসহ ১১ জন দায়িত্বশীল নেতাকে আমাদের বুক থেকে কেড়ে নিয়েছে। অন্যায়ের প্রতিবাদ যারা করেছে, তাদের গুম করেছে। অসংখ্য ভাইকে খুন করেছে। চাকরি কেড়ে নিয়েছে। ব্যবসা ছিনিয়ে নিয়েছে। কাউকে কাউকে দেশেও থাকতে দেয়নি। মানুষের কল্যাণে কাজ করার কারণে অনেকে জিন্দা শহীদ হয়ে আছে। হাত-পা টুকরা-টুকরা। এই কষ্টের জীবন নিয়ে তাঁরা বেঁচে আছেন।’
কর্মী সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী মহানগর জামায়াতের আমির ড. মো. কেরামত আলী। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি ইমাজ উদ্দিন মণ্ডল।
আরও বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য নুরুল ইসলাম বুলবুল, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, মোবারক হোসাইন, রাজশাহী অঞ্চল পরিচালক অধ্যক্ষ মো. সাহাবুদ্দিন প্রমুখ।