ধানমণ্ডি ৩২ : শুরু থেকে যা যা ঘটেছে
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2025/02/06/dhanmondi_32_thamb.jpg)
ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি বুলডোজার দিয়ে ভেঙে তা ধ্বংসস্তূপে পরিণত করা হয়েছে। সেখানে শতশত উৎসুক জনতার উপস্থিতি। কেউ ভিডিও করছেন, কেউ ছবি তুলছেন। এই যখন পরিস্থিতি তখন সেখানে চলছে ভুরিভোজের আয়োজন। মাংস কাটাকাটি চলছে। বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতারা উল্লাস করছেন। দিচ্ছেন পলাতক শেখ হাসিনাবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান। এ দৃশ্য ছিল আজ বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যার। এর আগে ঘটেছে আরও অনেক ঘটনা। যা নিয়ে দেশ-বিদেশে আলোচনার শেষ নেই। অন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোও এ খবর প্রকাশ করেছে।
গণঅভ্যুত্থানে ভারতে পালানোর ৬ মাস পূর্তির দিন ছিল ৫ ফেব্রুয়ারি। এ দিন নিষিদ্ধ ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের ফেসবুক পেজে শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচার করা হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। এ ঘোষণার কারণে গতকাল বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দিনভরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উত্তেজনা বিরাজ করে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশ নেওয়া অনেকে ও অনলাইন অ্যাকটিভিস্টরা ফেসবুকে ধানমণ্ডি ৩২ অভিমুখে ‘বুলডোজার মিছিল’ এবং ‘মার্চ টু ধানমণ্ডি ৩২’ কর্মসূচির ডাক দেন।
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/very_big_1/public/images/2025/02/06/baarri_2_0.jpg)
এরপর থেকে উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়। বুধবার রাত ৯টায় শাহবাগে জড়ো হয়ে ধানমণ্ডি ৩২ অভিমুখে যাত্রা শুরু করেন কর্মসূচির ডাক দেওয়া ব্যক্তিরা। যদিও গতকাল রাত ৮টার আগেই ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বিভিন্ন এলাকা থেকে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা জড়ো হতে থাকে। তারা সেখানে বিক্ষোভ করতে থাকে। রাত ৮টার দিকে বিক্ষোভকারীরা শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ির ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে ভাঙচুর শুরু করে। তারা বাড়ির সামনে শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালও ভাঙচুর করে। রাত ৮টা ৪০ মিনিটে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরের ভবনের তৃতীয় তলায় আগুন লাগে। রাত ৯টার দিকে লাঠিসোঁটা ও শাবল দিয়ে বাড়ির সীমানাপ্রাচীর ভাঙা শুরু হয়। কিছুক্ষণ পর সেনাবাহিনীর একটি দল ৩২ নম্বরের বাড়িটির সামনে যায়। এ সময় বিক্ষোভকারীরা স্লোগান দেওয়া শুরু করে। একপর্যায়ে সেনাবাহিনীর দলটি সেখান থেকে মিরপুর রোডের দিকে চলে যায়।
রাত ১০টার দিকে বিক্ষোভকারীরা বাড়িটির বিভিন্ন অংশ ভাঙার চেষ্টা করে। বাড়িটি বুলডোজার দিয়ে মাটিতে মিশিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে সামনের সড়কে বিক্ষোভ চলছিল। অন্যদিকে বাড়িটির কাছেই ধানমণ্ডি লেকের পাশে খোলা জায়গায় প্রজেক্টর বসিয়ে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে প্রামাণ্যচিত্রের প্রদর্শনী করা হচ্ছিল। রাত ১১টার দিকে একটি ক্রেন নিয়ে আসে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। পরে আনা হয় একটি এক্সকাভেটর। মধ্যরাতে এই ভারী যন্ত্র দিয়ে ভবন ভাঙা শুরু হয়। রাত দুইটা নাগাদ বাড়িটির অনেক অংশ ভাঙা শেষ হয়। এসব ঘটনা চলার মধ্যে নানা ধরনের আওয়ামীবিরোধী স্লোগানে মুখরিত করে রাখে ছাত্র-জনতা। রাতভর ভবন ভাঙার কাজ চলতে থাকে।
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/very_big_1/public/images/2025/02/06/dhanmondi_in.jpg)
ফজরের নামাজের পর আরও বিক্ষোভকারী ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে যান। ভারী যন্ত্র দিয়ে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর ভবনটি ভাঙা শুরু হয়। সকাল থেকে আরও লোকজন জড়ো হতে থাকে। এভাবে আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা পর্যন্ত এ ভাঙার কাজ চলতে থাকে। এরপর সেখান থেকে ক্রেন ও এক্সকাভেটর সরিয়ে নেওয়া হয়। এ পর্যন্ত সেখানে থাকা দুটি ভবনের অনেক অংশই ভাঙা হয়ে যায়। তখনও শতশত উৎসুক জনতা সেখানে হাজির হতে থাকে। হাজির হওয়া এসব জনতার অনেকে ছবি তুলছিলেন, ভিডিও করছিলেন।
দুপুর ১টার দিকে দেখা যায়, ভবনের ভাঙা অংশের কনক্রিটে থাকা লোহার রড খুলে নিয়ে যাচ্ছেন লোকজন। ওই রড বের করার জন্য ইট-সিমেন্টের খণ্ডাংশও ভেঙে ফেলছেন কেউ কেউ। ওই ভবনগুলোর চারিপাশের বাউন্ডারিতে থাকা লোহার কাঁটাতারের বেড়াও খুলে নিয়ে যায় জনতা। তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়, কেন খুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এসব লোহা? তাদের কেউ জানান বিক্রির কথা। কেউ-বা জানান স্মৃতি হিসেবে রেখে দেওয়ার কথা।
একই ধরনের দৃশ্য ভেঙে ফেলা পুরো বাড়িতেই চলছে। সে সময় চোখ আটকে যায় ভেতরে থাকা তিনটি পুড়ে যাওয়া গাড়িতে। এই তিনটি গাড়িতে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর আগুন দেওয়া হয়েছিল, তখন অবশ্য পুরো বাড়িতেই অগ্নিসংযোগ করা হয়েছিল। পুড়ে যাওয়া তিনটি গাড়িতে অবশিষ্ট থাকা লোহা হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে এবং লোহা খোলার যন্ত্র দিয়ে খুলে নেওয়া হচ্ছে। তিনটি গাড়িতে অন্তত ১০ জন এসব লোহা তুলতে দেখা যায়। তারাও একই ধরনের কথা জানান। কেউ বিক্রি করবেন। কেউ স্মৃতি হিসেবে রেখে দেবেন।
এরপর ঘটে এক অন্যরকম ঘটনা। ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরের দুটি পুরতন ভবন ছিল। আর একটি ছিল নির্মাণাধীন ভবন। গুজব রটে যায়, ওই নির্মাণাধীন ভবনের মাটির নিচে আরও তিন তলা রয়েছে এবং মাটির নিচের ওইসব তলাগুলোতে আয়নাঘর রয়েছে। বিকেল ৫টার দিকে ওই নির্মাণাধীন ভবনে নিচে যায় এই প্রতিবেদক। গিয়ে দেখা যায়, মাটির নিচে দুই তলা পর্যন্ত রয়েছে। নিচের তলার গ্রাউন্ডে পানি অর পানি। তিন হাতের মতো পানির গভীরতা দেখা যায় সিঁড়ির গোড়ায়। আর ওপরের তলায় কোনো ঘর ছিল না। ছিল কেবল পিলার দেওয়া।
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/very_big_1/public/images/2025/02/06/gru_0.jpg)
সন্ধ্যার ঠিক আগে আগে দেখা যায়, সেখানে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা একটি গরু জবাই করে ভুরিভোজের আয়োজনে করছে। সন্ধ্যা ৬টার দিকে জবাই করা গরুর মাংসগুলো কসাইরা টুকরো টুকরো করছিল। এর কিছুক্ষণ পরে মাংস টুকরো করার কাজ শেষ হয়। সে সময় এক কসাই বলেন, ১১০ কেজির মতো মাংস হবে। সে সময় আয়োজকরা জানান, গরুটি দেড় লাখ টাকা দিয়ে কেনা। ছাত্র-জনতার টাকা দিয়েই গরুটি কেনা হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বলেন, দেড় লাখ টাকা দিয়ে গরুটি কেনা হয়েছে। সব টাকাই ছাত্র-জনতার। কেউ একশো, কেউ পাঁচশ; এভাবে টাকা দিয়েছে। রাতেই রান্না করে সবাইকে খাওয়ানো হবে। আমাদের কথা একটাই, এ দেশে আর কোনো ফ্যাসিবাদের ঠাঁই হবে না। এভাবে চলতে থাকে তাদের আয়োজন। ধানমণ্ডি ৩২ এ জমতে থাকে ভীড়।