ইতালিতে মানবপাচারকারী চক্রের দুই সদস্য গ্রেপ্তার
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2025/02/12/keraniganj_arrest_news.jpg)
ইতালিতে উন্নত জীবনের প্রলোভন দেখিয়ে লিবিয়ায় নিয়ে আটকে নির্যাতন করে মুক্তিপণ দাবি ও মৃত্যুর ঘটনায় দুটি পৃথক মামলার লিপন মাতুব্বর ও আনোয়ার ওরফে আনো মাতুব্বর নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-১০।
আজ বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) কেরানীগঞ্জে র্যাব ১০-এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ কামরুজ্জামান সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব ১০-এর অধিনায়ক বলেন, বাংলাদেশ থেকে বেকার যুবকদের ইতালিতে উন্নত জীবনের প্রলোভন দেখিয়ে লিবিয়ায় নিয়ে আটকে নির্যাতন, মুক্তিপণ আদায় ও মৃত্যুর ঘটনা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রচারিত হলে দেশব্যাপী ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ফরিদপুরের ভাঙ্গা ও মাদারীপুরের রাজৈরের কতিপয় ব্যক্তির মরদেহের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখতে পেয়ে ভুক্তভোগীদের পরিবারের সদস্যরা সংশ্লিষ্ট আদম ব্যবসায়ীদের বাড়িতে গিয়ে তাদের বিষয়ে জানতে চান। তখন তারা বিভ্রান্তিকর তথ্য দেন এবং আত্মগোপনে চলে যান। ওই ঘটনায় মিন্টু হাওলাদার বাদী হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা থানায় এবং নাজমিন বেগম বাদী হয়ে মাদারীপুরের রাজৈর থানায় মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব ১০-এর অধিনায়ক আরও বলেন, এরই ধারাবাহিকতায় গত রাতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা, র্যাব-৩ ও র্যাব ১০-এর যৌথ আভিযানিক দল রাজধানীর ভাটারা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় মাদারীপুরের রাজৈর থানার মানব পাচার মামলার এজাহারনামীয় প্রধান আসামি লিপন মাতুব্বর (৩৫) এবং আজ সকালে ঢাকার দোহার এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ফরিদপুরের ভাঙ্গা থানার মামলার এজাহারনামীয় প্রধান আসামি আনোয়ার (আনো) মাতুব্বরকে (৪৫) গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব ১০-এর অধিনায়ক বলেন, প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায় লিপন মাতুব্বরের ভাই তপন মাতুব্বর একজন লিবিয়া প্রবাসী। লিপন তার ভাইয়ের মাধ্যমে অবৈধ পথে লিবিয়া হয়ে ইতালিতে লোক পাঠায়। প্রত্যেক ব্যক্তির সঙ্গে জনপ্রতি ১৬ লাখ টাকা চুক্তি করা হয়। বিভিন্ন ধাপে ভুক্তভোগীদের পরিবারের কাছ থেকে টাকা নেয়। তারপর তাদের শাহাজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আগে থেকে অবস্থান করা দালাল চক্রের অন্য সদস্যদের কাছে ভিকটিমদের হস্তান্তর করে। এরপর তাঁরা তাদের লিবিয়ায় নিয়ে আটকে অমানবিক নির্যাতন করে ভিডিও ধারণ এবং সেই ভিডিও ভুক্তভোগীর পরিবারের কাছে পাঠিয়ে টাকা দাবি করে। টাকা পাওয়ার পর তাদের ভূমধ্যসাগরে একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় তুলে দেওয়া হয়। ভূমধ্যসাগরে নৌকা ডুবির ঘটনায় অনেকে মারা যায় বলেও জানায়। তাঁদের অমানবিক নির্যাতনে অনেকে লিবিয়ায়ই মারা গেছে বলে জানান। লিপন একেকজনের থেকে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা করে পেতেন বলে জানান। তিনি পেশায় একজন রং মিস্ত্রি। রাজধানীর ভাটারা এলাকায় বসবাস করেন। তিনি-চার মাস ধরে মানপাচার চক্রটির সঙ্গে জড়িত। এ পর্যন্ত ৬-৭ জনকে ইতালি পাঠানোর উদ্দেশে লিবিয়াতে পাঠিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
র্যাব ১০-এর অধিনায়ক আরও বলেন, আনোয়ার ওরফে আনো মাতুব্বরকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তিনি ও ভিকটিম হৃদয় একই এলাকার বাসিন্দা। হৃদয় হাওলাদার বাড়িতে বেকার থাকায় আনোয়ার তাঁকে উন্নত জীবনের প্রলোভন দেখিয়ে সাড়ে ১৬ লাখ টাকার বিনিময়ে দুই মাসের মধ্যে ইতালিতে পাঠানোর প্রস্তাব দিলে হৃদয় রাজি হন। পরে হৃদয়ের বাবা গত বছরের ১ নভেম্বর আনোয়ারকে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং হৃদয়ের পাসপোর্ট দেন। ২৭ নভেম্বর হৃদয় হাওলাদার ইতালি যাওয়ার জন্য লিবিয়া যান। সেখান থেকে মোবাইল ফোনে পরিবারকে জানান সেখানে তাঁকে নির্যাতন করা হচ্ছে এবং অবশিষ্ট ১৫ লাখ টাকা না দিলে তার ক্ষতি হবে। এরপর হৃদয়ের পরিবার আনোয়ারের কাছে বাকি ১৫ লাখ টাকা দেয়। এর কিছুদিন পর হৃদয় পরিবারকে জানান, লিবিয়ায় এ চক্রের অন্য সদস্যরা তাকে আটকে রেখে অমানবিক নির্যাতন করছে। তখন তাঁর বাবা আনোয়ারের বাড়িতে গিয়ে হৃদয়কে নির্যাতনের কথা জানালে তিনি আরও ১০ লাখ টাকা দাবি করেন এবং টাকা না দিলে তাঁকে ইতালি পাঠানো যাবে না বলে জানান। ছেলের কথা চিন্তা করে পুনরায় আনোয়ারের কাছে পাঁচ লাখ টাকা দেন বাবা। এরপর গত ২২ জানুয়ারি জানুয়ারি রাতে হৃদয় পরিবারকে জানান, লিবিয়ায় অবস্থানরত চক্রের অন্য সদস্যরা তাঁকে নির্যাতন করেছে। এরপর থেকে তাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরে পরিবারের লোক জানতে পারে তিনি মারা গেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব ১০-এর অধিনায়ক বলেন, ভয়ঙ্কর এই চক্রের অন্য সদস্যদের আটক করার জন্য র্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।