পাঁচ হাজার চিকিৎসক নিয়োগে বিশেষ উদ্যোগ সরকারের

স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতে শূন্য পদ পূরণে পাঁচ হাজার চিকিৎসক নিয়োগে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়।
গতকাল রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের প্রথম দিনের দ্বিতীয় কার্য-অধিবেশন শেষে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রী) অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
এ সময় স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম উপস্থিত ছিলেন। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ডিসিদের এ অধিবেশন হয়।
অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, ‘তাদের (ডিসি) দিক থেকে যেসব ইনপুট এসেছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে—জনবলের অভাব, অবকাঠামো তৈরি হয়ে আছে কিন্তু সেগুলো ফাংশনাল করা যাচ্ছে না। এই সমস্যাগুলোর কথা তারা বলেছেন। কোথাও ৫০০ শয্যার জায়গায় এক হাজার ২০০ রোগী থাকছে। কোথাও কোথাও ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি এগুলো প্রতিষ্ঠা করার চাহিদা রয়েছে বা এগুলো কার্যকর করার জন্য বলেছেন।
ডা. সায়েদুর রহমান আরও বলেন, ‘বিভিন্ন ধরনের বেআইনি হাসপাতাল ও ক্লিনিক রয়েছে, এসব ক্ষেত্রে ওনারা (ডিসি) আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে যেন আমাদের স্বাস্থ্য কাঠামোর পাশে থাকেন, সেই বিষয়ে বলা হয়েছে। সেটা মোটা দাগে এই স্বাস্থ্যের যে জনবল কাঠামো, সেটা নিয়ে আরও ভালো স্বাস্থ্য সেবা দেওয়া সম্ভব। আমরা তাদের কাছে এ আহ্বান জানিয়েছি।’
‘স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা একটি রাষ্ট্রের কল্যাণমুখী রূপান্তরের মৌলিক উপাদান। আমরা আশা করব জেলা এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রশাসন রাষ্ট্রের কল্যাণমুখী রূপান্তরে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।’
বিশেষ সরকারী বলেন, ‘আমরা গত কয়েকদিনে স্পষ্ট দেখেছি যে, এন্ট্রি পদে প্রায় ৫ হাজারের বেশি পদে চিকিৎসক প্রয়োজন। এ ছাড়া বিশেষজ্ঞ পদ এবং অন্যান্য আধুনিক হাসপাতালগুলোতে আমাদের পদের প্রয়োজনীয়তা আছে। পদ সৃষ্টি এবং এর আর্থিক সংশ্লেষ একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। আমরা ইতোমধ্যে পাঁচ হাজার পদ সৃষ্টির জন্য প্রক্রিয়া শুরু করেছি। ইউনিয়নেও যেমন পদের ঘাটতি রয়েছে, তেমনি মেডিকেল কলেজেও রয়েছে।’
অধ্যাপক সায়েদুর রহমান আরও বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে চেষ্টা করছি আমাদের মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি বিশেষ উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। অল্প দিনে যদি এই উদ্যোগটি সফল হয়; অল্প দিনে বিশেষ বন্দোবস্তে যদি আমরা নতুন পদে জনবল নিয়োগ করতে পারি; তখন এ সমস্যা থেকে উত্তরণ হবে।’
‘শূন্য পদ পূরণের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এখন সর্বোচ্চ অ্যাফোর্ট দিচ্ছে। চিহ্নিত করে শূন্য পদ পূরণে যেগুলো স্থানীয় পর্যায়ে সম্ভব সেগুলো স্থানীয় পর্যায়ে, যেগুলো কেন্দ্রীয়ভাবে সম্ভব সেগুলো পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে পূরণ করা হবে। প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই শূন্য পদপূরণ আমাদের একটি অগ্রাধিকার। যেসব ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় চিকিৎসকের সৃজন করা প্রয়োজন, অন্যান্য ক্ষেত্রে শূন্য পদপূরণ অগ্রাধিকার।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আহতদের চিকিৎসা নিয়ে যেটুকু অসন্তোষ দেখা যাচ্ছে, আমরা মনে করি ১২-১৪ হাজার আহতের তুলনায় সে সংখ্যাটা আসলে খুবই কম। অসন্তোষের মাত্রা কোনোভাবেই এক শতাংশও না।
ওষুধের ভেজাল রোধ করে মান রক্ষায় সব জেলায় মিনি ল্যাব সম্প্রসারণ করতে হবে বলেও জানান প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী।
সম্মেলনে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম বলেন, ‘ডিসিরা নানা রকমের প্রশ্ন করেছেন। বিশেষ করে হাসপাতাল সংক্রান্ত সমস্যা, মেডিকেল কলেজ সংক্রান্ত সমস্যা, নানান সমস্যার কথা বলেছেন। সেই সমস্যাগুলো সম্পর্কে আমরা জানি। আমরা চেষ্টাও করছি সেগুলো অ্যাড্রেস করার জন্য।’
নূরজাহান বেগম আরও বলেন, ‘আমাদের মনে হচ্ছে বিভিন্ন রোগের প্রতিরোধমূলক কিছু করা উচিত। যেমন—উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস হচ্ছে; এর কারণগুলো কী? এগুলোর জন্য আমরা কী পদক্ষেপ নিতে পারি, মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে কী করতে পারি। ছোট ছোট বাচ্চারা এখন ই-সিগারেটের অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছে। এগুলো নিয়ে আমরা সচেতনতা বাড়াতে পারি। অনেক ক্ষেত্রে আমাদের আইন আছে কিন্তু আইনের প্রয়োগটা নেই।’
‘আইনের প্রয়োগটা দিয়ে যারা দুষ্টামি করছে, তাদেরকে কীভাবে শায়েস্তা করা যায়, তাও আমরা তাদের বলার চেষ্টা করেছি।’—যোগ করেন নুরজাহান বেগম।
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ৪০ জনকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠিয়েছি। আমরা কখনোই টাকার দিকে তাকাইনি। আমরা তাদেরকে সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। তাদের চিকিৎসা করার জন্য আমরা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে ডাক্তারদেরও এনেছি।’
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আমরা তাদের ট্রমাটা ওইভাবে অ্যাড্রেস করতে পারছি না। এটা (চিকিৎসা নিয়ে অসন্তোষ) আস্তে আস্তে কমে যাবে, আমরা তাদের সমন্বিতভাবে পুনর্বাসনের চেষ্টাও করছি। আমরা তাদের পুনর্বাসন করলে আর অসন্তোষ থাকবে না।’