তিস্তাপাড়ে জড়ো হচ্ছে মানুষ, কণ্ঠে ‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’ স্লোগান

তিস্তা নদীর ন্যায্য হিস্যা আদায় ও তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে তিস্তাপাড়ের পাঁচ জেলার ১১টি স্থানে ৪৮ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’ স্লোগানে আজ সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকেই তিস্তাপাড়ের পাঁচ জেলা—লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, রংপুর, নীলফামারী ও গাইবান্ধার মানুষেরা জড়ো হতে শুরু করেছেন।
বিকেল ৩ টায় লালমনিরহাট সদর উপজেলার তিস্তা রেল ও সড়ক সেতুর মধ্যবর্তী স্থানে তিস্তা নদীরক্ষা আন্দোলনের ব্যানারে আয়োজিত সমাবেশের উদ্বোধন করবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিস্তাপাড়ে কয়েক লাখ মানুষের সমাগম হবে বলে আশা প্রকাশ করছেন তিস্তা নদী রক্ষা কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু। তিনি লালমনিরহাট জেলা বিএনপিরও সভাপতি।
প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে থাকছে মূল প্রতিবেদন—
লালমনিরহাট সদর ও আদিতমারী প্রতিনিধি মামুনুর রশিদ জানান, কর্মসূচি সফল করতে হাজার হাজার মানুষ যানবাহনযোগে এবং পায়ে হেঁটে তিস্তা নদীর দুই তীরের মোট ১১টি স্পটে অবস্থান নিয়েছেন। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে লোক সমাগম বাড়ছে।
আয়োজকেরা বলছেন, শুধু বাংলাদেশ নয় গোটা বিশ্ব দেখবে—একটি নদীর জন্য কত পিছিয়ে রয়েছে এই অঞ্চলের মানুষ।
তিস্তার কর্মসূচিকে ঘিরে পালাগান, সারিগান, ভাওয়াই, লালন, লোকসংগীত ও গ্রামীণ খেলাধুলা হা-ডু-ডু, ঘুড়ি উড়ানো, গোল্লাছুট ও দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে।
তিস্তা কর্মসূচিকে ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। বড় বড় প্যান্ডেল করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনার জন্য মঞ্চ, রাত্রিযাপনের জন্য অসংখ্য তাঁবু টাঙানো হয়েছে। খাবারের আয়োজনও রয়েছে।
কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া আন্দোলনকারীরা বলছেন, পানি বণ্টন চুক্তি ও তিস্তা মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে। সরকারের প্রতি ভারতের ওপর কূটনৈতিক চাপ বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়ে তারা বলেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে বন্যা ও খরার স্থায়ী সমাধান সম্ভব।
তিস্তার পাড়ে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া এম গোলাম মোস্তফা (৬০) ও হাসানুল আজিজ (৫৫) বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে অনেক প্রত্যাশা তাদের। সকল রাজনৈতিক জটিলতা দূর করে তিস্তা নদীকে ঘিরে যে মহাপরিকল্পনা রয়েছে, তা দ্রুত বাস্তবায়ন চান এই অঞ্চলের সকল মানুষ।

কুড়িগ্রাম উলিপুর ও চিলমারী প্রতিনিধি তানভীরুল ইসলাম জানান, অন্য পয়েন্টগুলোর মতো উলিপুরের থেতরাই পাকার মোড়ে কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ইতিমধ্যে প্যান্ডেল তৈরি করা হয়েছে। মূল প্যান্ডেল থেকে সকল প্রোগ্রাম সরাসরি সম্প্রচারের জন্য প্রজেক্টর স্ক্রিন প্রস্তুত রাখা হয়েছে। রাত্রিযাপনের প্রস্তুতি রয়েছে। খাবার তৈরির কার্যক্রমও চলছে।
কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এই পয়েন্টে মানুষের রাত্রিযাপনের জন্য প্যান্ডেলের ব্যবস্থা রয়েছে। সমাবেশে পর্যাপ্ত লাইটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, বিশুদ্ধ পানির জন্য নলকূপ স্থাপনসহ সকল ধরনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এ আন্দোলনের পরেও সরকার যদি তিস্তা চুক্তি ও মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন না করে, তাহলে লাগাতার কর্মসূচি চলবে।’
তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের বিএনপির উপজেলার সাবেক সভাপতি হায়দার আলী মিয়া এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এটি রংপুর বিভাগবাসীর আন্দোলন। আমরা উলিপুর পয়েন্টের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। আন্দোলনে তিস্তাপাড়ের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ রয়েছে।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আগামীকাল মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় পাঁচ জেলার ১১টি পয়েন্টে ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দুপুরের পরে সমাবেশে বক্তব্য রাখবেন।