রাজনৈতিক হয়রানির জন্য খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নাইকো মামলা : বিচারক

নাইকো দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ আটজনকে খালাস দিয়েছেন আদালত। আজ বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক রবিউল আলম এ রায় ঘোষণা করেন। বিচারক তার পর্যবেক্ষণে বলেন, রাজনৈতিক কারণে এবং হয়রানি করার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ অপর আসামিদের এ মামলায় জড়িত করা হয়েছে।
খালাস পাওয়া অপর সাতজন হলেন—তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সি এম ইউছুফ হোসাইন, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেল করপোরেশনের চেয়ারম্যান সেলিম ভূঁইয়া ও নাইকোর দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ।
এদিন আজ বেলা ১১ টা ২৪ মিনিটে রায় ঘোষণা করতে বিচারক এজলাসে ওঠেন। বিচারক বলেন, প্রশ্ন হতে পারে—সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে কীভাবে আসামির আত্মপক্ষ শুনানি করা হচ্ছে? ডিএলআরের ১৭ থেকে ২১ পর্যন্ত এ বিষয়ে বলা আছে। কোনো আসামি আইনজীবীর মাধ্যমে হাজিরায় থাকলে তার অনুপস্থিতিতে আত্মপক্ষ শুনানি করা যায়। আবার রায়ও দেওয়া যায়। সেই অনুযায়ী রায় দেওয়া হচ্ছে।
পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেছেন, একই ধরনের মামলা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধেও ছিল। যেহেতু এ মামলা চলে নাই, তবুও এ মামলার ফুল ট্রায়াল হয়েছে। আসামি সেলিম ভূঁইয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এর আগে তিনি চার দিনের রিমান্ডে ছিলেন। তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদায় করা হয়। পরে অবশ্য তা প্রত্যাহারের আবেদন করা হয়। সেখানেও বলেছেন তাকে শারীরিক, মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে।
বিচারক আরও বলেন, মামলা তেজগাঁও থানার, কিন্তু তাকে রাখা হয় গুলশান থানায়। সেখানে নির্যাতনের পর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। প্রসিকিউশনের পক্ষকে ডিনাই করছে। তাদের এটা জানাও নাই। রেকর্ডে দেখা গেছে, তাকে যে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল বর্হিবিভাগের টিকিটও আছে। তাকে বাইরে থেকে ওষুধও কিনে দেওয়া হয় এর রশিদও আছে।
বিচারক তার পর্যবেক্ষণে বলেন, সেলিম ভূঁইয়াকে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করে ফোর্সগুলো ১৬৪ নেওয়া হয়েছে। সে কারণে এই ১৬৪কে ট্রু বলার সুযোগ নাই। এর উদ্দেশ্য হলো গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, কাশেম শরীফসহ অন্যদের জড়িত করার জন্য জোরপূর্বক এ ১৬৪ গ্রহণ করা হয়েছে। রাজনৈতিক কারণে এবং হয়রানি করার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ অপর আসামিদের জড়িত করা হয়েছে।
গত ১৩ ফেব্রুয়ারি আসামিপক্ষের আত্মপক্ষের শুনানি ও যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায়ের জন্য ১৯ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেছিলেন আদালত।
মামলার নথি থেকে জানা গেছে, ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তৎকালীন সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম তেজগাঁও থানায় খালেদা জিয়াসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। কানাডিয়ান প্রতিষ্ঠান নাইকোর সঙ্গে অস্বচ্ছ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতিসাধন ও দুর্নীতির অভিযোগে এ মামলা হয়। পরে ২০১৮ সালের ৫ মে খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। এতে তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতিসাধনের অভিযোগ আনা হয়।
২০২৩ সালে ১৯ মার্চ এ মামলায় অভিযোগ গঠন করেন আদালত। এ ছাড়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন ও বাপেক্সের সাবেক সচিব মো. শফিউর রহমান মারা যাওয়ায় মামলা থেকে তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।