সীমান্তে বিজিবিকে কঠোর নজরদারি আরও বাড়াতে হবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, সীমান্ত রক্ষা, চোরাচালান প্রতিরোধ, নারী ও শিশু পাচার রোধসহ যে কোনো ধরনের সীমান্ত অপরাধ দমনে বিজিবিকে দায়িত্বশীলতার সাথে কাজ করতে হবে। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ প্রতিরোধ ও মাদকের আগ্রাসনরোধে সীমান্তে বিজিবিকে আরও কঠোর নজরদারি বাড়াতে হবে।
কক্সবাজার বিজিবি সদর দপ্তরে শনিবার (১ মার্চ) দুপুরে নবগঠিত উখিয়া ব্যাটালিয়নের পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বিজিবি উখিয়া ৬৪ ব্যাটালিয়ান উদ্বোধন ছাড়াও বিজিবি ঢাকা স্টেশন সদর দপ্তর, ঢাকা গার্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ান এবং গাজীপুরে ডগ স্কোয়াড কে-নাইন ইউনিট এন্ড ট্রেনিং সেন্টার সহ চারটি ইউনিটের পতাকা উত্তোলন করেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, জনসাধারণের জীবন ও সম্পদ রক্ষাসহ সরকার কর্তৃক অর্পিত যে কোনো দায়িত্ব সুশৃঙ্খলার সাথে পালন করে বিজিবির সুনাম ও মর্যাদা আরও বৃদ্ধি করতে হবে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বিগত কয়েক বছরে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘাতের জেরে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে স্পর্শকাতরতা অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। সাম্প্রতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে একটি ব্যাটালিয়ন স্থাপন সময়ের দাবি ছিল। এরই প্রেক্ষিতে সীমান্তে নজরদারি ও তৎপরতা বাড়ানোর লক্ষ্যে কক্সবাজারের উখিয়ায় একটি বিজিবি ব্যাটালিয়ন প্রতিষ্ঠা করা হলো। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা, অবৈধ অনুপ্রবেশ, ইয়াবা ও ক্রিস্টাল মেথ আইসসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য ও অন্যান্য অবৈধ পণ্যের চোরাচালান প্রতিরোধ, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ যেকোনো আন্তঃসীমান্ত অপরাধ দমন এবং সীমান্তবর্তী জনসাধারণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানে উখিয়া ব্যাটালিয়ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, নবগঠিত উখিয়া ব্যাটালিয়ন সীমান্তে পার্শ্ববর্তী দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ব্যাটালিয়ন ও বিওপিগুলোর সাথে বিজিবি ব্যাটালিয়ন বিওপির দায়িত্বপূর্ণ আনুপাতিক অসামঞ্জস্যতা কিছুটা কমে আসবে। এতে করে বিজিবি আরও ভালভাবে দেশের সীমান্তে টহল ও নজরদারি করতে সক্ষম হবেন। এছাড়া রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ প্রতিরোধ ও মাদকের আগ্রাসনরোধে উখিয়া ব্যাটালিয়ন বিজিবি কক্সবাজার জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা টেকনাফ ও উখিয়ায় কার্যকরী ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, দেশের সীমান্ত রক্ষার গুরুত্বপূর্ণ ও মহান দায়িত্ব বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের ওপর ন্যাস্ত। সীমান্তের নিরাপত্তা রক্ষা করা, চোরাচালান, নারী ও শিশু এবং মাদকপাচার সংক্রান্ত অপরাধসহ অন্যান্য আন্তঃরাষ্ট্র সীমান্ত অপরাধ প্রতিরোধ, অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে প্রশাসনকে সহায়তাসহ সরকার কর্তৃক অর্পিত অন্য যেকোনো দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনে বিজিবির প্রতিটি সদস্য অঙ্গীকারবন্ধ।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, নতুন এই ইউনিটসমূহ বিজিবির কাজের গতিশীলতা বৃদ্ধিতে বিশেষ অবদান রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি। এটা খুবই স্বাভাবিক যে, নতুন ইউনিট হিসেবে কিছু সীমাবদ্ধতা মোকাবিলা করে আপনাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। বাহিনী তথা দেশের বৃহত্তর স্বার্থে এই সাময়িক অসুবিধা মেনে নিয়েই আপনাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। মনে রাখবেন একটি আধাসামরিক বাহিনীর সদস্য হিসেবে যে কোন প্রতিকূলতার মধ্যে বাহিনীর সাফল্য অর্জনে প্রত্যেককে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই, নতুন ইউনিটের সীমাবদ্ধতাগুলো দ্রুততম সময়ের মধ্যে সমাধানের চেষ্টা করা হবে। সকলের কঠোর পরিশ্রম ও নিরলস প্রচেষ্টায় সব ধরনের সীমাবদ্ধতা ও প্রতিকূলতা জয় করে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে নতুন বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় সহায়ক ভূমিকা পালন করবো। আমি বিশ্বাস করি, আপনাদের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই নতুন ইউনিট সমূহ অচিরেই দক্ষ ও আদর্শ ইউনিটের মর্যাদায় সুপ্রতিষ্ঠিত হতে সক্ষম হবে।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ২২৯ বছরের ঐতিহ্যবাহী সীমান্তরক্ষী বাহিনী। এই বাহিনীর রয়েছে অত্যন্ত গৌরবময় ও সমৃদ্ধ ইতিহাস। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে এই বাহিনীর সাহসী ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সাহসী অগ্রণী ভূমিকা মুক্তিকামী বাঙালিদের সাহস ও প্রেরণা যুগিয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধে তৎকালীন ইপিআর এর মোট ৮১৭ জন সদস্য সাহসিকতার সাথে যুদ্ধ করে দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন।
অনুষ্ঠানে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী, রামু সেনানিবাস ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আসাদুল্লাহ মিনহাজুল আলম, বাংলাদেশ বিমান বাহিনী কক্সবাজার ঘাঁটির এয়ার ভাইস মার্শাল এ এফ এম শামীমুল ইসলাম, রিজিয়ন কমান্ডার, কক্সবাজার, বিজিবি সদর দপ্তর ও কক্সবাজার রিজিয়নের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।