ফরিদপুরে অযত্নে অবহেলায় বেড়ে উঠছে ভাটফুল, ছড়াচ্ছে সৌন্দর্য

ফরিদপুর জেলার বিভিন্ন ঝোপঝাড়ে জঙ্গলে এমনকি রাস্তার ধারেও নিজের সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে ভাটিফুল বা ভাটফুল। এই ফুল ফরিদপুর অঞ্চলে বনজুঁই নামেও পরিচিত। জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ঝোপঝাড়ে, জঙ্গলে, রাস্তার পাশে, এখানে-সেখানে নিজের সৌন্দর্যের রূপ ও সুবাস ছড়িয়ে মানুষকে মুগ্ধ করছে এই ফুল। স্থানভেদে এটির নাম ভাট ফুল, ঘেটু ফুল, ভাত ফুল, ঘণ্টাকর্ণ থাকলেও ফরিদপুর অঞ্চলে ‘ভাটিফুল’ নামেই বেশি পরিচিত।
এই ফুলের মনোমুগ্ধকর সৌরভে প্রজাপতি, মৌমাছি, পিঁপড়াসহ নানা প্রজাতির কীট-পতঙ্গের আনাগোনা চোখে পড়ার মতো। এরা ফুলের সুগন্ধ, সৌরভে ব্যাকুল হওয়া ছাড়াও ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করতে আসে।
ফরিদপুর কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বসন্তের আগমনে পলাশ-শিমুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এই ফুল ফোটে। এ ফুল ফাল্গুন ও চৈত্র মাসে ফুটতে দেখা যায়। বিশেষ করে পরিত্যক্ত মাঠ, বন, রাস্তা কিংবা জলাশয়ের পাশে ভাটি ফুলের ঝোপ চোখে পড়ে। ভাঁটি গাছের প্রধান কাণ্ড সোজাভাবে দণ্ডায়মান। সাধারণত ২ থেকে ৪ মিটার লম্বা হয় এ ফুলের গাছ। এ গাছের পাতা দেখতে কিছুটা পানপাতার আকৃতির ও খসখসে। ডালের শীর্ষে পুষ্পদণ্ডে ফুল ফোটে। পাপড়ির রং সাদা এবং এতে বেগুনি রঙের মিশ্রণ আছে। বসন্ত থেকে গ্রীষ্ম অবধি এ ফুল ফোটে। এ ফুলের রয়েছে মিষ্টি সৌরভ। রাতে বেশ সুঘ্রাণ ছড়ায়। ফুল ফোটার পর মৌমাছিরা ভাট ফুলের মধু সংগ্রহ করে।
ভাঁটি ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম Clerondendron viscosum। ভাঁটি গুল্মজাতীয় বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ। গাছের প্রধান কাণ্ড খাড়া, সাধারণত ২ থেকে ৪ মিটার লম্বা হয়। পাতা কিছুটা পানপাতার আকৃতির ও খসখসে। পাতা ৪ থেকে ৭ ইঞ্চি লম্বা হয়। ডালের শীর্ষে পুষ্প দণ্ডে ফুল ফোটে। পাপড়ি সাদা, তাতে বেগুনি মিশেল আছে। ভাঁট মিয়ানমার ও ভারতীয় প্রজাতি ভাটি ফুল ওষুধি উদ্ভিদ। এর পাতা কবিরাজরা অ্যাজমা, টিউমার, সাপের কামড়ের প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহার করেন। এছাড়া গ্রামাঞ্চলের মানুষেরা জ্বর, চর্মরোগ ও বিছার হুল ফোটানোতে এর পাতা, ফল, ফুল ও মূল ভেষজ হিসেবে ব্যবহার করেন।
ফরিদপুরসহ দেশের সর্বত্রই ভাটিফুলের কম বেশি দেখা মেলে। অযত্নে অবহেলায় ফুটে থাকা ভাঁটি যেন বিশাল ফুলের তোড়া। চৈত্রের প্রথম থেকেই দেখা মিলছে এই ভাঁটি ফুলের। এটাকে অনেকে বন জুঁই বা ঘেটু ফুল নামেও চেনে। তবে স্থানীয়রা বলছেন, বর্তমান সময়ে ভাঁটি আগের তুলনায় কম দেখা যাচ্ছে।
প্রকৃতির কবি জীবনানন্দ দাশও পড়েছিলেন ভাঁটি ফুলের প্রেমে। তাইতো কবি তার ‘বাংলার মুখ’কবিতায় লিখেছেন, ‘ছিন্ন খঞ্জনার মতো যখন সে নেচেছিল ইন্দ্রের সভায়/ বাংলার নদী মাঠ ভাঁট ফুল ঘুঙুরের মতো তার কেঁদেছিল পায়।’
শুকলা নামে এক কলেজছাত্রী বলেন, একসময় গ্রামগঞ্জে ভাটি ফুল দেখতে পেতেন। এখন আগের মতো সচরাচর দেখা যায় না। অযত্নে প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে উঠলেও সৌন্দর্যে কোনো কমতি নেই। এই ফুল দিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা পূজাও করেন।
বোয়ালমারী উপজেলার ময়না সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কালিপদ চক্রবর্ত্তী বলেন, ভাটি ফুল সৌন্দর্যপ্রিয় মানুষের মনের খোরাক জোগায়। রাস্তার পাশে, পরিত্যক্ত জমিতে অনাদর অবহেলায় বেড়ে ওঠা ভাট গাছের ফুল বসন্তে প্রাকৃতিক সৈন্দর্যে যোগ করে বাড়তি মাত্রা। পথচারীরা উপভোগ করেন আবহমান বাংলার আদি বুনো ফুলের অপরূপ রূপ।
কালিপদ চক্রবর্ত্তী আরও বলেন, ‘ভাটি ফুল সৌন্দর্যপ্রিয় মানুষের মনের খোরাক জোগায়। ভাটি ফুল সৌন্দর্য প্রেমীদের মুগ্ধ করে। রাস্তার দুপাশে থোকায় থোকায় ফুটে থাকা ফুলের সৌন্দর্য আসা-যাওয়ার পথে পথচারীদের মুগ্ধতা ছড়ায়। প্রকৃতিতে ফাল্গুন মাস এলেই এ গাছে ফুল ফোটে। এতে পরিবেশে নতুন এক মাত্রা যোগ হয়।’