সেতুর কাজ ফেলে লাপাত্তা ঠিকাদার, ভোগান্তিতে হাজারো মানুষ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার রসুলাবাদ ও শিকানিকা গ্রামের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া যমুনা নদীতে সেতু নির্মানের কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স ইউনুছ আল মামুন ও মেসার্স জাকির এন্টার প্রাইজ। কিন্তু প্রায় আট মাস আগে কাজ শেষ না করেই পালিয়ে গেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে হাজারো মানুষ।
জানা গেছে, ২০২২ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এলজিইডির অধীনে যমুনা নদীর ওপর ৮১ মিটার সেতু নির্মাণের জন্য সাত কোটি ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। দরপত্র অনুযায়ী সেতুটি নির্মাণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স ইউনুছ আল মামুন ও মেসার্স জাকির এন্টার প্রাইজকে (জেভী) ২০২৩ সালের ৫ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালে ৪ জুলাই পর্যন্ত ৫৪০ দিনের মধ্যে কাজটি শেষ করতে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। দেড় বছরে মধ্যে কাজটি শেষ হওয়ার কথা ছিল। সেতুর দুপাশে সামান্য পাইলিংয়ের কাজ শেষ করেই প্রায় আট মাস আগে পালিয়ে যান ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন। প্রকল্পের মেয়াদ অনুযায়ী সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছে চলাচলকারী রসুল্লাবাদ, সাতমোড়া, জিনদপুর, ইব্রাহীমপুর ও লাউর ফতেহপুর ইউনিয়নের মানুষ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, যমুনা নদীর ওপর সেতুর দুই পাড়ে সামান্য পাইলিং করা হয়েছে। বর্তমানে স্থানীয়দের উদ্যোগে সেতুর পাশে বাঁশের সাঁকো তৈরি করা হয়। যেটা দিয়ে এলাকাবাসী ও পথচারীরা পারাপার হয়।
সাঁকো পারাপারের সময় কথা হয় শিকানিকা গ্রামের কৃষক হোসেন আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সেতুর কিছু কাজ হয়েছে। এরপর কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের সাঁকো দিয়ে আমাদের পারাপার হতে হচ্ছে।’
নদীর তীরে স্থানীয় দোকানদার সবুজ মিয়া বলেন, একটি সেতু না হওয়া আমাদের দীর্ঘদিনের ভোগান্তি। এখানে সেতু হলে চলাচলেও যেমন পরিবর্তন আসবে, তেমনি আমাদের আয়-উপার্জনও বৃদ্ধি পাবে।
এ রাস্তায় চলাচলকারী কয়েছ আহমেদ বেপারী জানান, এই সেতুটি নির্মাণ হলে পাঁচটি ইউনিয়নের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ সহজে যাতায়াত করতে পারবে।
স্কুল ও কলেজ পড়া একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, নদীর ওপর সেতু না থাকায় মানুষের যে কষ্ট তা বলে বোঝানো যাবে না। স্কুল কলেজে যাওয়ার সময় অনেক শিক্ষার্থী সাঁকো থেকে পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়।
রসুল্লাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খন্দকার মনির হোসেন বলেন, সেতুটি অনেক জনগুরুত্বপূর্ণ। এটি নির্মাণ হলে এ রাস্তায় চলাচলকারী আশপাশের পাঁচটি ইউনিয়নের অনেক মানুষ উপকৃত হবেন। তাই পুনরায় দরপত্রের মাধ্যমে নতুন ঠিকাদার দিয়ে সেতুর কাজটি শুরু করতে হবে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
নবীনগর উপজেলার এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুব হোসেন বলেন, দরপত্রের চুক্তির শর্ত না মানায় পূর্বের ঠিকাদারদের সঙ্গে কার্যাদেশ বাতিল প্রক্রিয়াধীন। নতুন করে রি-টেন্ডার করে অচিরেই সেতুটির কাজ শুরু করা হবে।