বাংলাদেশে গুতেরেসের সফর রোহিঙ্গা ইস্যুকে সামনে তুলে এনেছে

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস চার দিনের বাংলাদেশ সফর শেষ করে কর্মস্থলে ফিরেছেন। বৈদেশিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা এটিকে এই সময়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে দেখছেন, বিশেষত যখন দক্ষিণ এশীয় এই দেশটি একটি চ্যালেঞ্জিং সময় অতিবাহিত করছে।
বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা-বাসসকে সাবেক কূটনীতিক হুমায়ুন কবির বলেন, ‘নিশ্চিতভাবেই এই সফরটি খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বিশেষত এমন একটি সময় যখন বাংলাদেশ একটি রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, সামনে নির্বাচনের চ্যালেঞ্জিং সময় আসছে, সংস্কারের উদ্যোগ চলছে ও রোহিঙ্গা সংকটের মতো অন্যান্য বাহ্যিক বিষয়গুলো অনিশ্চিত অবস্থায় রয়েছে। যদি বিদেশি বন্ধুরা এ সংকটময় পরিস্থিতিতে আমাদের পাশে দাঁড়ায়, তবে, এটি দেশের জন্য সর্বোপরি একটি ভালো সংকেত।’
বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের (বিইআই) থিঙ্ক ট্যাঙ্কের নেতৃত্ব দেওয়া হুমায়ুন বলেন, ‘জাতিসংঘ মহাসচিবের থেকে ভালো আর কে ই বা হতে পারে, যিনি এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে আমাদের পাশে থাকবেন ও বাহ্যিক বিষয়ের কারণে সৃষ্ট সংকট মোকাবিলায় সহায়তা করবেন।’
সফরের সময় আন্তোনিও গুতেরেস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে দেখা করে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ও সংস্কারের কারণে বাংলাদেশ যে ‘গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত’ অতিক্রম করছে তা উল্লেখ করেছেন।
জাতিসংঘের মহাসচিব ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার উপস্থিতিতে ইফতার করেছেন। পবিত্র রমজান মাসে সফর করার জন্য এই বিশেষ সুযোগটি তাঁর পক্ষে গ্রহণ করা সম্ভব হয়।
জাতিসংঘ গুতেরেসের সফরের শেষে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘বাংলাদেশের দক্ষিণে অবস্থিত রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের সময় গুতেরেস কঠোরভাবে অনুদান কর্তন করার ফলে হুমকির মুখে থাকা খাদ্য সরবরাহ ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ত্রাণ প্রচেষ্টার কারণে সৃষ্টি হতে পারে এমন অধিকতর দুর্দশা রোধে তাঁর ক্ষমতায় থাকা সবধরনের সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।’ তিনি রোহিঙ্গাদের ‘বিশ্বের সবচেয়ে বৈষম্যের শিকার জনগোষ্ঠীর একটি’ হিসেবে উল্লেখ করেন। মিয়ানমারে উদ্ভূত পরিস্থিতি এবং অনুদান কর্তন করার কারণে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে সে সম্পর্কে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘সহায়তা কর্তন করা অপরাধ।’ তিনি বলেন, পশ্চিমা দেশগুলো যখন প্রতিরক্ষা ব্যয় দ্বিগুণ করতে ব্যস্ত, তখন বিশ্বজুড়ে মানবিক সাহায্যের ক্ষেত্র ক্রমশ সংকুচিত হচ্ছে।
জাতিসংঘ প্রধান বাংলাদেশের জনগণকে আশ্বস্ত করেন, রাজনৈতিক রূপান্তরের এই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে শান্তি আনয়ন, জাতীয় সংলাপ, আস্থা ও নিরাময় প্রবর্তনে জাতিসংঘ বাংলাদেশকে যেকোনো সহায়তা করতে প্রস্তুত।
এর আগে শুক্রবার, জাতিসংঘের মহাসচিব বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রবর্তিত সংস্কার প্রক্রিয়ার প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেন।
বৈঠকের সময় ড. ইউনূসকে জাতিসংঘের মহাসচিব বলেন, ‘আমি সংস্কার প্রক্রিয়ার প্রতি আমাদের সম্পূর্ণ প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করতে চাই। আমরা আপনাদের সংস্কারকে সমর্থন করতে এখানে এসেছি। আপনাদের জন্য শুভকামনা জ্ঞাপন করছি ও এর জন্য আমরা কি কি করতে পারি, আমাদের জানান।’
‘আমি জানি সংস্কার প্রক্রিয়া জটিল হতে পারে’ উল্লেখ করে মহাসচিব আশা প্রকাশ করেন, সংস্কারগুলো একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দিকে দেশটিকে ধাবিত করবে ও দেশের ‘প্রকৃত রূপান্তর’ ঘটাবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এ সফরের দ্বিতীয় কারণটি হল দৃশ্যত মানবিক তহবিল সংগ্রহে প্রচেষ্টা চালাতে রোহিঙ্গা সংকটের দিকে মনোনিবেশ করা, যেহেতু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য বন্ধ করে দেওয়ায় কানাডা বাংলাদেশের জন্য সহায়তা ঘোষণা করে। হুমায়ুন মনে করেন, এক্ষেত্রে জার্মানি একটি সক্ষম বিকল্প ছিল। কিন্তু মিয়ানমার এবং দেশটির রাখাইন রাজ্যে অস্থিরতা ও গৃহযুদ্ধ তার সফরকে আরও তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলেছে।
উদ্ভূত পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য একটি বিশাল ঝুঁকি তৈরি করেছে। কারণ, এই অবস্থার ফলে বাংলাদেশে আরও রোহিঙ্গাদের আশ্রয় নেওয়ার প্রচেষ্টা দেখতে পাওয়া যাচ্ছে যা ‘বাংলাদেশ একেবারেই চায় না।’
হুমায়ুন কবির বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার ঘোষণা করেছে যে তারা এই বছরের শেষের দিকে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন করবে ও এই ক্ষেত্রে জাতিসংঘের সমর্থন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কেননা জাতিসংঘ মহাসচিবের কথার গুরুত্ব ব্যাপক।