পুলিশে ভর্তি ও বদলিতে বাণিজ্য অনেক কমেছে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও তেলবাজির বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেনেন্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, ‘পুলিশে ভর্তি ও বদলিতে বাণিজ্য (দুর্নীতি) এখন অনেক কমেছে। কোনো এসপি বলতে পারবে না আমি কারও জন্য তাদের কাছে রিকোয়েস্ট করেছি।’
আজ মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) বিকেল ৩টার দিকে যশোরের জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
এখন পুলিশের ওপর পর্যায়ের সব বদলি একটা কমিটির মাধ্যমে হয় জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনের সংখ্যা বেড়ে যায়, যাদের অনেককে আমি চিনিও না। পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বন্ধু বা আত্মীয় পরিচয়ে আপনাদের কাছে কেউ গেলে প্রথম দিন চা খাওয়াবেন, দ্বিতীয় দিন গেলে পুলিশে ধরিয়ে দেবেন।
পুলিশ সদস্যদের কঠোর নির্দেশনা দিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘কোনোভাবেই সিভিল ড্রেসে কাউকে গ্রেপ্তার করা যাবে না। ইউনিফর্মে থাকতে হবে, অথবা ভেস্ট পরা থাকতে হবে।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, থানার ওসি বদলির রিকোয়েস্ট বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। ওসি বদলির এতো রিকোয়েস্ট থাকে যে তারা ভাবে ওসিই বুঝি তাদের পার করে দেবে। জনগণ তাদের পার করবে কিনা এইটা চিন্তায় নেই। কর্মচারীদের মধ্যে একটা জিনিস শুরু হয়েছে, কে ভবিষ্যতে ক্ষমতায় আসবে তাদের এখনই তেল মারা শুরু করে দিয়েছে। আমি একটা কথা সবসময় বলি, আপনার কাছে যে তেল আছে, তা আপনার কাছে রেখে দেন। যে বেটা এখন তেল ব্যবহার করছে, তার তেল শেষ হয়ে যাবে। এরপর আপনি আপনার তেল ব্যবহার করে যেখানে উঠতে চান উঠেন। এখন আমাদের তেল মারার কোনো দরকার নেই।’
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘এখনই দেখি অফিসে কোনো নেতা এলে হয় একজন অ্যাডিশনাল সেক্রেটারি, অথবা জয়েন্ট সেক্রেটারি, নয়তো ডেপুটি সেক্রেটারি তার পেছন পেছন হাঁটা শুরু করে।’ মতবিনিময়ে উপস্থিত কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্য করে উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনাদের লেভেলে এটা (তেলবাজি) হয় না, কিন্তু ওপরের লেভেলে খুব বেশি হচ্ছে।’ তেলবাজি বন্ধ করা দরকার উল্লেখ করে উপস্থিত দুই সচিবকে লক্ষ্য করে উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনারা অন্য অফিসারদের এ বিষয়ে বলবেন। এ নিয়ে আমরাও অনেক সময় অস্বস্তিতে পড়ি।’
উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে উপদেষ্টা বলেন, আমরা অরাজনৈতিক সরকার। আমাদের সঙ্গে কাজ করতে আপনাদের অনেক সুবিধা। আমরা অনেক ক্ষেত্রেই ‘না’ বলতে পারি। রাজনৈতিক সরকার তা পারে না।
এ সময় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আব্দুল হাফিজ, যশোর সেনানিবাসের জিওসি মেজর জেনারেল জে এম ইমদাদুল ইসলাম, খুলনা বিভাগের ডিআইজি রেজাউল হক, জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম, পুলিশ সুপার রওনক জাহান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।