অর্থ সংকটে থমকে আছে জুলাই অভ্যুত্থানে গুলিবিদ্ধ ইমরানের জীবন

অর্থ সংকটে চিকিৎসা করাতে পারছেন না জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গুলিবিদ্ধ ইমরান হোসেন (১৬)। শরীরে এখনও রয়েছে ২৯টিরও বেশি ছররা গুলির ক্ষত। চিকিৎসার অভাবে দিন দিন খারাপ হচ্ছে তার শারীরিক অবস্থা। অর্থ সংকটে স্থবির হয়ে পড়েছে এই দুঃসাহসী কিশোরেরর জীবন।
ইমরান হোসেন পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার খানমরিচ ইউনিয়নের দুধবাড়িয়া গ্রামের দিনমজুর জহুরুল ইসলামের ছেলে। সে স্থানীয় একটি মাদ্রাসার নবম শ্রেণির ছাত্র।
জানা গেছে, ইমরান পড়াশোনার পাশাপাশি নানা সামাজিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন। স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে পরিবারকে সচ্ছলতা এনে দেবেন। কিন্তু সেই স্বপ্নে হানা দেয় গত বছরের ৫ আগস্ট। ঢাকার আশুলিয়ার বাইপাইলে ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে পুলিশের ছোড়া ছররা গুলিতে গুরুতর আহত হন ইমরান। আন্দোলনের সময় মিছিলের সামনেই ছিলেন তিনি। হঠাৎ করেই শুরু হয় গুলিবর্ষণ, মুহূর্তেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন ইমরান। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। চিকিৎসকরা জানান, তার শরীরে প্রবেশ করা ছররা গুলির সংখ্যা ২৯টিরও বেশি। এরপর থমকে গেছে তার স্বাভাবিক জীবন। প্রতিদিন যন্ত্রণা নিয়ে ঘুম ভাঙে, ঘুমাতে পারেন না ঠিকমতো। চলাফেরাতেও সীমাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে।
ইমরান হোসেন বলেন, ‘আমার শরীরে এখনও ১২-১৩টি গুলি রয়ে গেছে। ঠিকমতো হাঁটতেও পারি না। কোনো কাজও করতে পারি না। চিকিৎসা করাতে পারছি না টাকার অভাবে। দিন দিন শরীরের অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছে।’
ইমরানের বাবা জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘ঢাকায় রিকশা চালিয়ে যা আয় করি, তা দিয়ে কোনোরকমে চলে পরিবারের খরচ। ছেলের চিকিৎসায় এখন পর্যন্ত অনেক টাকা খরচ হয়েছে। এখন আর এই বিশাল খরচ বহন করার ক্ষমতা নেই আমার। এখন ছেলের চিকিৎসার খরচ জোগাতে কোথায় যাব, কার কাছে যাব বুঝতে পারছি না।’
ইমরানের মা বলেন, ‘ছেলের কষ্ট আর সহ্য করতে পারছি না। সারা দিন চোখের সামনে সন্তানের যন্ত্রণায় ধুঁকে ধুঁকে জীবন কাটানো দেখেও কিছু করতে না পেরে আমি কষ্টে শেষ হয়ে যাচ্ছি।’
খানমরিচ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মনোয়ার হোসেন খান মিঠু বলেন, ‘ইমরানের পরিবারের পাশে থাকার চেষ্টা করছি। তার চিকিৎসা নিশ্চিত করতে আমরা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সহযোগিতা করব।’
ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজমুন নাহার বলেন, ‘ইমরানের চিকিৎসার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এবং সামাজিকভাবে কিছু নগদ অর্থ সহায়তা করা হয়েছে। তার চিকিৎসার জন্য উপজেলা প্রশাসন সবসময় পাশে থাকবে। আমরা ইমরানের বিষয়টি গুরুত্বসহ দেখছি।’