উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ইচ্ছামতো অফিস করার অভিযোগ

নওগাঁর বদলগাছী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কানিস ফারহানার বিরুদ্ধে ইচ্ছামতো অফিসে আসা-যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ফলে প্রায় দুই লাখেরও বেশি মানুষের স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হচ্ছে।
উপজেলা সদর থেকে ২১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা গেছে, রোগীদের উপচেপড়া ভিড়। সেবা না পেয়ে অনেক রোগী ব্যথায় কাতরাচ্ছেন। কিন্তু উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কানিস ফারহানাকে অফিসে পাওয়া যায়নি। তার অনুপস্থিতিতে চিকিৎসা সেবা ও দাপ্তরিক কাজে নানা জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। জরুরি বিভাগের চিকিৎসক রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন। তবে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলছেন, মাঝে মধ্যে দাপ্তরিক কাজে বাইরে থাকতে হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ডা. কানিস ফারহানা ২০২২ সালের ১৪ মার্চ এই হাসপাতালে যোগ দেন। তখন থেকেই বিভিন্ন অজুহাতে অনুপস্থিত থাকেন। গত নভেম্বরে তিনি ১০ দিন ও ডিসেম্বরে ১৮ দিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া অনেক দিন তিনি দেরিতে আসেন। দুপুর দেড়টায় অফিস ত্যাগ করেন।
সরেজমিনে ডা. কানিস ফারহানার বিরুদ্ধে পাওয়া অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। শুধু অনুপস্থিতিই নয়, তিনি মাসের পর মাস সরকারি গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করছেন। সরকারি কোয়ার্টারে থাকার নিয়ম থাকলেও যোগদানের পর থেকেই তিনি নওগাঁ সদর থেকে অফিস করেন।
স্থানীয়রা আরও জানায়, গত এক বছর ধরে চালক না থাকায় অ্যাম্বুলেন্স সেবা বন্ধ রয়েছে। গত বছরের ৪ ডিসেম্বর রাতে হাসপাতালে চুরি হয়। রাজস্ব খাতের দুই লাখ ২৮ হাজার টাকা খোয়া যায়। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চার মাসেও কোনো মামলা করেনি। চলতি মাসের ৭ এপ্রিল থেকে আউটডোরে টিকিটের দাম তিন টাকার পরিবর্তে পাঁচ টাকা নেওয়া হচ্ছে। এসব বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে বারবার জানানো হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
সচেতন মহল বলছে, সরকারি বিধি অনুযায়ী একজন কর্মকর্তা তিন বছরের বেশি একই জায়গায় থাকতে পারেন না। কিন্তু এত অনিয়মের পরও ডা. কানিস ফারহানা স্বপদে বহাল আছেন। তার বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
আজ বুধবার (২৩ এপ্রিল) দুপুরে ডা. কানিস ফারহানা মুঠোফোনে বলেন, ‘চুরির ঘটনায় থানায় জিডি করা হয়েছে। পুলিশ তদন্ত করছে। টিকিটের দাম বেশি নেওয়ার বিষয়ে অফিস স্টাফদের সাবধান করা হয়েছে।’ দেরিতে অফিসে আসা ও কম সময় থাকার বিষয়ে তিনি দাপ্তরিক কাজের কথা বলেন এবং নিয়মিত অফিস করার চেষ্টা করেন বলে জানান।
ব্যক্তিগত কাজে সরকারি গাড়ি ব্যবহারের কারণ জানতে চাইলে ডা. কানিস ফারহানা বলেন, ‘এটি একটি প্রকল্পের গাড়ি। প্রকল্প বন্ধ থাকায় নিজের খরচে ব্যবহার করছেন।’
সরকারি গাড়ি ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার করা যায় কিনা, এই প্রশ্নের কোনো উত্তর তিনি দেননি।
এ ব্যাপারে নওগাঁর সিভিল সার্জন ডা. মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, তিনি অভিযোগ পেয়েছেন এবং বদলগাছি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বায়োমেট্রিক হাজিরা পরীক্ষা করবেন। অনিয়ম পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া প্রকল্পের সরকারি গাড়ি ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহারের জন্য ডা. কানিস ফারহানাকে শোকজ করা হবে। অন্যান্য অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে।