বাবার বয়স ৭৫, ছেলের ১৩৮!

হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে এক অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটেছে। জাতীয় পরিচয়পত্রে (এনআইডি) বাবা ও ছেলের বয়সের অস্বাভাবিক ব্যবধানের কারণে একটি পরিবার চরম বিপাকে পড়েছে। বাবা হারিছ মিয়ার বয়স যেখানে ৭৫ বছর, সেখানে ছেলে জিতু মিয়ার এনআইডিতে বয়স লেখা হয়েছে ১৩৮ বছর! এই ভুলের কারণে জিতু মিয়া তার সন্তানদের স্কুল-মাদ্রাসায় ভর্তি করাতে পারছেন না।
বিষয়টি নিয়ে ভুক্তভোগী পরিবার স্থানীয় নির্বাচন অফিসে সংশোধনের আবেদন করেও কোনো সমাধান পায়নি। এমনকি জন্মনিবন্ধন সংশোধন করতে গিয়েও জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি জন্মনিবন্ধন সংশোধনের জন্য আবেদন করা হলে তিন মাসেও তা সংশোধন হয়নি। অবশেষে, আজ মঙ্গলবার (১৩ মে) জিতু মিয়া আবারও জন্মনিবন্ধন সংশোধনের জন্য নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেছেন।
জিতু মিয়ার এনআইডির তথ্য অনুযায়ী, তার বাবা হারিছ মিয়ার জন্ম তারিখ ১৯৫০ সালের ১ মার্চ, আর তার নিজের জন্ম তারিখ ১৮৮৭ সালের ২ মার্চ। অর্থাৎ, ছেলে জিতু মিয়া তার বাবার চেয়ে ৬৩ বছর ২ মাসের বড়! বর্তমানে তার জন্মনিবন্ধনের আবেদন অনুযায়ী তার সঠিক জন্ম তারিখ ১৯৮৭ সালের ২ মার্চ। কিন্তু এনআইডিতে ভুলভাবে ১৮৮৭ সাল উল্লেখ করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী জিতু মিয়া জানান, ১৫ থেকে ২০ বছর আগে তিনি বিদেশে ছিলেন এবং দালালের মাধ্যমে হাতে লেখা পাসপোর্ট তৈরি করেছিলেন। বর্তমানে তার পাসপোর্ট ও এনআইডির তথ্যে কোনো মিল নেই। এখন তার ১২ বছর বয়সী ছেলেকে মাদ্রাসায় ভর্তি করাতে গেলে এনআইডিতে ১৩৮ বছর বয়স দেখে কর্তৃপক্ষ ভর্তি নিতে রাজি হচ্ছে না। জন্মনিবন্ধন সঠিক না হওয়ায় তার মেয়েকেও মাদ্রাসায় ভর্তি করানো যায়নি। তিনি আরও বলেন, তিনি লেখাপড়া জানেন না, তাই এনআইডিতে এত বেশি বয়স দেওয়া হয়েছে তা বুঝতে পারেননি। বর্তমানে তার বয়স ৩৮ বছর ২ মাস। এনআইডি সংশোধনের জন্য তিন মাস আগে ইউনিয়ন পরিষদ ও নির্বাচন অফিসে গিয়ে চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করেছেন এবং টাকা খরচ করেও কোনো লাভ হয়নি।
জিতু মিয়ার বাবা হারিছ মিয়া বলেন, ছেলের এনআইডিতে ভুল বয়স দেখানোর কারণে লোকজন হাসাহাসি করছে। সে ওই কার্ড দিয়ে কোনো কাজ করতে পারছে না। এই ভুল সংশোধনের জন্য বাপ-বেটা উভয়েই হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন জানান, এনআইডিতে বয়স ভুলের সংশোধনের জন্য আইন অনুযায়ী উপযুক্ত নথিপত্র প্রয়োজন। জিতু মিয়ার অনলাইন আবেদন পাওয়া গেলেও তিনি কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ দিতে পারেননি। তিনি সিভিল সার্জনের কাছ থেকে মেডিকেল রিপোর্ট নিয়ে এলে জন্মনিবন্ধন সংশোধনের চেষ্টা করা হবে। জন্মনিবন্ধনের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা উত্তম কুমার দাস জানান, ২০০৭ সালে সার্ভারে ভোটার তালিকা তৈরির সময় এই ভুল হতে পারে। জন্মনিবন্ধন সংশোধন ছাড়া এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। সংশোধিত অনলাইন জন্মনিবন্ধন পেলে তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।