লিবিয়ার বন্দিশালা থেকে দেশে ফিরলেন ১৫৮ বাংলাদেশি

উত্তর আফ্রিকার দেশ লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলির একটি বন্দিশালায় আটক থাকা ১৫৮ জন বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন৷ মঙ্গলবার (১৭ জুন) সকাল পৌনে ৬টায় বুরাক এয়ারের একটি ফ্লাইটে তারা ঢাকায় পৌঁছান৷
লিবিয়ার ত্রিপোলিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা বিষয়টি ইনফোমাইগ্রেন্টসকে নিশ্চিত করে জানিয়েছে, ত্রিপোলির তাজুরা ডিটেনশন সেন্টারে আটক ছিলেন এই ১৫৮ জন বাংলাদেশি নাগরিক৷ জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)-এর সহযোগিতায় তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে৷
বাংলাদেশ দূতাবাস জানিয়েছে, বাংলাদেশিদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনে আইওএম বুরাক এয়ারের একটি বিশেষ ফ্লাইট ভাড়া করে, এটির নম্বর ইউজেড ২২২৷ ১৬ জুন (সোমবার) লিবিয়ার ত্রিপোলির মেতিগা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ১০ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশে উড্ডয়ন করে বিমানটি৷ ১৭ জুন (মঙ্গলবার) সকাল পৌনে ৬টায় ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে বাংলাদেশিদের নিয়ে আসা বিমানটি৷
অবতরণের পর ১৫৮ জন বাংলাদেশি নাগরিককে বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার কর্মকর্তারা৷
সূত্র জানিয়েছে, লিবিয়া থেকে ফেরত পাঠানো বাংলাদেশিদের একটি বড় অংশ ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে ইউরোপে পোঁছানোর আশায় লিবিয়া গেছেন৷ তাদের অনেকেই মানবপাচারকারীদের ফাঁদে পড়েছিলেন৷ কিন্তু লিবিয়া পৌঁছানোর পর তাদের বেশিরভাগই বিভিন্ন সময়ে অপহরণ ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন৷ শেষপর্যন্ত তারা আটক ছিলেন তাজুরা ডিটেনশন সেন্টারে৷
বিমানবন্দরে লিবিয়া থেকে ফিরে আসা বাংলাদেশিরা যেন আর কখনও এই ভয়ঙ্কর পথে পা না বাড়ান, সেজন্য তাদের সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা৷
লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাস জানিয়েছে, আগের দিন লিবিয়ার অভিবাসন অধিদপ্তরের অভ্যর্থনা হলে দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ও মিনিস্টার (রাজনৈতিক) কাজী আসিফ আহমেদের নেতৃত্বে দূতাবাসের একটি প্রতিনিধি দল প্রত্যাবাসিত অভিবাসীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং তাদের বিদায় জানান৷
দেশে ফেরত পাঠানোর আগে চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স তাদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে দূতাবাসের নেওয়া পদক্ষেপগুলো তুলে ধরেন৷ একইসঙ্গে আগামীতে নিজেদের দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে নিয়মিত পথে বিদেশে আসার পরামর্শ দেন তিনি৷
তারও আগে তাজুরা ডিটেনশন সেন্টার পরিদর্শন করে আটক বাংলাদেশিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন দূতাবাসের কর্মকর্তারা৷ তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে তাদের প্রত্যেকের জন্য ট্রাভেল পারমিট ইস্যু করে দূতাবাস৷ পরবর্তীতে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে এবং আইওএম-এর সার্বিক সহযোগিতায় বাংলাদেশিদের বিনা খরচে দেশে ফেরার ব্যবস্থা করা হয়েছে৷
তাদের মধ্যে এক বাংলাদেশির কথা উল্লেখ করেছেন দূতাবাসের কর্মকর্তা৷ ওই বাংলাদেশির বাড়ি বগুড়া৷ বেশ কয়েক বছর ধরেই লিবিয়ায় ছিলেন তিনি৷ দূতাবাসের কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ৷ তাকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর আগে দূতাবাসের অধীনে রাখার চেষ্টা করা হয়েছিল৷ কিন্তু ওই বাংলাদেশি থাকতে চাইতেন না৷ মাঝে মধ্যেই পালিয়ে যেতেন৷ অনিশ্চয়তা জেনেও মানসিক অসুস্থতা নিয়ে লিবিয়ায় থেকে যেতে চাইতেন তিনি৷ শেষপর্যন্ত ওই বাংলাদেশিকে বুঝিয়ে শুনিয়ে দেশে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়েছে বলে ইনফোমাইগ্রেন্টসকে জানিয়েছেন ওই কর্মকর্তা৷ নিরাপত্তার কারণে ওই বাংলাদেশির নাম প্রতিবেদনে উল্লেখ করেনি ইনফোমাইগ্রেন্টস৷
আরো একটি ফ্লাইট আসছে আজ
দূতাবাসের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘‘১৮ জুন আরো একটি ফ্লাইটে লিবিয়ায় আটকেটপড়া বাংলাদেশি নাগরিকদের আইওএম-এর সহযোগিতায় দেশে ফেরত পাঠানোর কথা রয়েছে৷ এ লক্ষ্যে কাজ চলছে৷”
তবে, এই ফ্লাইটে কত জন বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হবে, তা নির্দিষ্ট করে বলেননি তিনি৷ বলেন, ‘‘ওই ফ্লাইটে যেসব বাংলাদেশিরা ফিরবেন, তাদের সবাই ত্রিপোলিতেই থাকেন৷ তাদের অনেকে লিবিয়ায় কাজ করতে এসে নানা ধরনের বিপদের মুখে পড়েছেন৷ কেউ কাজ হারিয়েছেন, কেউ প্রতারিত হয়েছেন৷ এখন দেশে ফিরে যাওয়ার বিমানভাড়ার অর্থটুকুও তাদের কাছে নেই৷
তাই আইওএম-এর সহযোগিতা নিয়ে এসব বাংলাদেশিদের দেশে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাস৷
১৮ জুনের (আজ) ফ্লাইটে যেসব বাংলাদেশিরা দেশে ফিরে যাবেন তাদের আজকের মধ্যেই লাগেজ জমা দেওয়া ও শারীরিক পরীক্ষা সম্পন্ন করার অনুরোধ জানিয়েছে দূতাবাস৷ যারা লাগেজ জমা দিতে বা শারীরিক পরীক্ষা সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হবেন, তারা ভবিষ্যতে আইওএম-এর প্রত্যাবাসন সেবা নিতে জটিলতার মুখে পড়ার শঙ্কা রয়েছে বলে সতর্ক করেছে দূতাবাস৷
এদিকে, ১৮ জুনের ফ্লাইটের জন্য ৬১ জন বাংলাদেশির নাম প্রকাশ করা হয়েছে৷ তবে, সংখ্যাটি কম-বেশি হতে পারে বলে জানা গেছে৷
ইনফোমাইগ্রেন্টসকে দূতাবাস জানিয়েছে, ২০১৭ সাল থেকে চলতি বছরের মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত নয় হাজার ১৮৩ জন বাংলাদেশি নাগরিককে লিবিয়া থেকে দেশে ফেরানো হয়েছে৷ ২০২৩ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের ১৬ জুন পর্যন্ত মোট পাঁচ হাজার ৪২২ জন বাংলাদেশি নাগরিককে নিরাপদে প্রত্যাবাসন করা হয়েছে৷ এসব প্রত্যাবাসন আইওএম এর সহযোগিতায় হয়েছে৷