করোনার নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্টের টিকা নেই, পুরোনো মজুদ ৩২ লাখ

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশে সম্প্রতি সংক্রমিত করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্টের কোনো টিকা নেই। তবে আগের মজুদ করা ৩২ লাখ টিকা আছে যার মেয়াদ আছে কয়েক মাস।
গত এক মাসে নতুন করে দেশে করোনা সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিসংখ্যান বলছে, মে মাসে ১ হাজার ৪০৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১৩৪ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়।
সে হিসাবে শনাক্তের হার ৯ দশমিক ৫১ শতাংশ, যা ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের মে মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। কোভিড-১৯ পজিটিভ নমুনার সিকুয়েন্সিং তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বাংলাদেশে আগে থেকে বিদ্যমান ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের নতুন সাব ভ্যারিয়েন্ট XFG এবং XFC শনাক্ত হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, নতুন এই সাব ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ হার অন্য ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় বেশি। চলতি বছর জানুয়ারি থেকে জুন অবধি মোট ৭ জন করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন, যার সবকটি জুন মাসের প্রথম ১৭ দিনে। নতুন করে মহাখালীর বিশেষায়িত কোভিড হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন আক্রান্তরা, বাড়ছে পরীক্ষার চাপ।
নতুন করে আবার করোনা সংক্রমণ দেখা দেওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে টিকা নিয়ে। আদৌ পর্যাপ্ত পরিমাণে টিকা মজুদ আছে কিনা, থাকলেও তার কার্যকারিতা কতখানি—এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নতুন সাব ভ্যারিয়েন্টের এখনো কোনো টিকা আনা হয়নি দেশে, এমনকি কোনো টিকা কমিটিও গঠন হয়নি এখন পর্যন্ত।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ (সিডিসি) বিভাগের লাইন ডিরেক্টর হালিমুর রশিদ বলেন, সব মিলিয়ে ৩২ লাখের মতো টিকা আছে। ২০২৪-২৫ সালের ইউএস-সিডিসির গাইডলাইন-মাফিক যেসব টিকা আছে, সেগুলো ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের জন্য প্রযোজ্য। এ ছাড়া বাংলাদেশের আগের টিকাও ব্যবহার করা যাবে।
নতুন সাব ভ্যারিয়েন্টের জন্য আলাদা করে কোনো টিকা আনা হয়েছে কিনা—জানতে চাইলে রশিদ বলেন, এখন পর্যন্ত নতুন সাব ভ্যারিয়েন্টের টিকা আসেনি, তবে টিকা আনার কাজ চলছে। শিগগিরই টিকা কমিটি গঠন করে এ ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সংক্রমণ বাড়লেও দেশের মানুষের টিকা দেওয়ার কোনো আগ্রহ নেই উল্লেখ করে রশিদ বলেন, টিকা নিয়ে নানা ধরনের গুজব চালু আছে যার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। মানুষ নির্দিষ্ট কেন্দ্রে গেলেই টিকা দিতে পারবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর জানুয়ারি থেকে মার্চ—প্রথম তিন মাসে মাত্র ৪৩ জন করোনার টিকা নিয়েছেন। এর মধ্যে প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৭, দ্বিতীয় ডোজ ৫, বুস্টার ডোজ ১৬ এবং চতুর্থ ডোজ নিয়েছেন ১৫ জন।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, যারা আগে কখনো কোভিডের টিকা নেননি, তাদের মধ্যেই টিকা নেওয়ার প্রবণতা সবচেয়ে কম।
তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, আতঙ্কিত হয়ে সবার টিকা নেওয়ার প্রয়োজন নেই। নির্দিষ্ট শ্রেণির কিছু মানুষ আপাতত টিকা নিলেই চলবে।
সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু জাফর বলেন, যারা এখন পর্যন্ত কোভিডের কোনো টিকা নেননি, তাদের মধ্যে যারা সম্মুখসারির জনসম্পৃক্ত কাজের সঙ্গে যুক্ত এবং যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম (ইমিউনো কম্প্রোমাইজড) তাদের টিকা নিতে হবে।
এ ছাড়া যারা ষাটোর্ধ্ব, স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি-কোমর্বিডিটি আছে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাদের ছয় মাস পর আরেক ডোজ টিকা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক।
টিকার পাশাপাশি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ইতোমধ্যে শনাক্তকরণ কীট পাঠানোর কাজ শুরু করেছে; প্রস্তুত রাখা হয়েছে রোগীদের জন্য শয্যা।
করোনার নতুন সংক্রমণে আতঙ্কিত হওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মাহমুদা ইয়াসমিন বলেন, যদিও সংক্রমণ বাড়ছে তবুও করোনার নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার মতো পরিস্থিতি এখনো সৃষ্টি হয়নি।
তবে যত শ্লথ গতিতেই সংক্রমণ ছড়াক না কেন, করোনার নতুন সাব ভ্যারিয়েন্ট মোকাবিলায় এখন থেকেই প্রস্তুতি নেওয়ার ওপর জোর দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, পর্যাপ্ত প্রস্তুতি থাকলে মৃত্যুহার ও সংক্রমণ—দুটোই কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে এখন পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়ে ২৯ হাজার ৫০০ জনের বেশি মানুষ মারা গেছেন। যদিও শনাক্তের হারের সঙ্গে তুলনা করলে মৃত্যুহার বেশ কম।
দেশে সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রতি ১০০ জনে মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ০৫ শতাংশ, সুস্থতার হার ৯৮ দশমিক ৪২ শতাংশ এবং মৃত্যুহার ১ দশমিক ৪৪ শতাংশ।