পেঁয়াজের দাম কম, লোকসানের শঙ্কায় চাষিরা

পেঁয়াজের দাম কমে যাওয়ায় চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম পেঁয়াজ উৎপাদনকারী জেলা ফরিদপুরের চাষিরা। বর্তমানে জেলার বিভিন্ন হাটবাজারে প্রতি মণ পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকায়। কিন্তু চাষিদের দাবি, অন্তত ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা দর না পেলে লাভতো দূরের কথা, পুঁজি তোলা পর্যন্ত সম্ভব হচ্ছে না।
গতকাল রোববার (২২ জুন) সকালে ফরিদপুরের সালথা উপজেলার ঠেনঠেনিয়া পেঁয়াজ বাজার ঘুরে দেখা যায়, সকাল ৬টা থেকেই চাষিরা ভ্যান, নসিমন, অটোরিকশা কিংবা মাথায় করে বস্তা ও ঝুড়িতে পেঁয়াজ নিয়ে হাটে আসছেন। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা পাইকাররা দরদাম করে পেঁয়াজ কিনছেন। প্রতি সপ্তাহে রোববার ও বুধবার বসা এই হাট চলে দুপুর পর্যন্ত।
বাজারে মানভেদে প্রতি মণ পেঁয়াজের দাম উঠছিল দেড় হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৭০০ টাকা পর্যন্ত। জেলার অন্যান্য বাজারেও প্রায় একই চিত্র দেখা গেছে।
চাষিরা জানান, এ বছর পেঁয়াজ উৎপাদনে ব্যয় বেড়েছে। বীজ, সার, কীটনাশক, শ্রমিকের মজুরি সব কিছুতেই খরচ বেশি হয়েছে। মৌসুমের শুরুতে দর হাজার টাকার নিচে থাকায় অধিক দামের আশায় অনেকে ঘরে পেঁয়াজ মজুদ করে রেখেছিলেন। কিন্তু সময় গড়ালেও আশানুরূপ দাম পাওয়া যায়নি। বরং ঘরে রাখা পেঁয়াজ পচে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
ঠেনঠেনিয়া বাজারের পেঁয়াজচাষি নিজাম উদ্দিন শেখ, আলমগীর মোল্লা, ইব্রাহিম মাতুব্বর ও নিছার উদ্দিন খান জানান, একটু ভালো দামের আশায় এতদিন ঘরে রেখেছিলাম, কিন্তু এখন যে দর আছে, তাতেও পুঁজি টেকানো কঠিন। অন্তত ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা দর পেলেই লোকসানে না পড়ে খরচ তুলতে পারতাম।
অন্যদিকে, ব্যবসায়ীদের ধারণা, ঈদের পর হঠাৎ সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমে গেছে।
ঠেনঠেনিয়া বাজারের ব্যবসায়ী খোরশেদ মোল্লা বলেন, এই হাট থেকে প্রতি সপ্তাহে ৩০ থেকে ৪০টি ট্রাকে করে পেঁয়াজ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়। গড়ে একেক হাটে এক কোটি টাকার বেশি পেঁয়াজ বেচাকেনা হয়।
তবে কৃষকরা এখনও আশায় বুক বাঁধছেন। তাদের আশা, দাম কিছুটা বাড়লে অন্তত খরচের টাকা তোলা যাবে। না হলে অনেকেই আগামী মৌসুমে পেঁয়াজ চাষে আগ্রহ হারাতে পারেন বলে আশঙ্কা করছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শাহেদুজ্জামান বলেন, ফরিদপুরে মূলত তিন ধরনের পেঁয়াজের চাষ হয়- শীতকালীন মুড়িকাটা, হালি ও দানা পেঁয়াজ। এর মধ্যে হালি পেঁয়াজের চাষ সবচেয়ে বেশি। এ বছর জেলার ৩৮ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়েছে এবং উৎপাদনও সন্তোষজনক।