সাবেক মন্ত্রী হাছান মাহমুদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ও তার স্ত্রী নূরান ফাতেমার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।
আজ সোমবার (২৩ জুন) দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পৃথক দুই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. জাকির হোসেন গালিবের আদালত এ আদেশ দেন।
এর আগে আজ সকালে দুদকের পক্ষে সংস্থাটির সহকারী পরিচালক আল আমিন পৃথক দুই আবেদনে তাদের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক তা মঞ্জুর করেন।
গত ১৬ জানুয়ারি সাবেক মন্ত্রী হাছান মাহমুদ ও তার পরিবারের ৭৭টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দেন আদালত।
হাছান মাহমুদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে দুদকের আবেদনে বলা হয়, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও চট্টগ্রাম-৭ আসনের সাবেক এমপি হাছান মাহমুদ বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রী হিসেবে এবং সংসদ সদস্যের দায়িত্ব পালনকালে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। তিনি অসাধু উপায়ে অর্জিত জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে সঙ্গতিবিহীন ১ কোটি ১১ লাখ ৫৫ হাজার ৩১৮ টাকার সম্পদের মালিকানা অর্জন করেন। সেই সম্পদ ভোগদখলে রেখে অপরাধ করেছেন। এ ছাড়া তার নিজ যৌথ ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের নামে মোট ৯টি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে ৩৯ কোটি ৭৬ লাখ ৩৭ হাজার ৫৬৭ টাকা সন্দেহজনক লেনদেন করে তা হস্তান্তর, রূপান্তর, স্থানান্তরের মাধ্যমে অর্থপাচার করেছেন। এর মাধ্যমে তিনি দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারা : মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারা এবং ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(১) (ঘ) ও ৫(১) (৬) ধারা লঙ্ঘন করে ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। এই অভিযোগের ভিত্তিতে দুর্নীতি দমন কমিশন, সমন্বিত জেলা কার্যালয়, ঢাকা-১ এ মামলা দায়ের করা হয়েছে। এমতাবস্থায় আসামির বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এবং সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তার বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেওয়া একান্ত জরুরি।
অপরদিকে নূরান ফাতেমার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে দুদকের আবেদনে বলা হয়, নূরান ফাতেমা অবৈধভাবে ৫ কোটি ৫২ লাখ ৭৮ হাজার ১৯০ টাকা মূল্যের জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও ভোগদখল করেছেন, যা দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারার লঙ্ঘন। এ ছাড়া তিনি তার ব্যক্তিগত, যৌথ এবং তার প্রতিষ্ঠানের নামে পরিচালিত মোট ৫৬টি ব্যাংক হিসাবে ৬৮৩ কোটি ১৫ লাখ ৩৭ হাজার ৫৫৪ টাকা অস্বাভাবিক লেনদেনের মাধ্যমে অর্থ পাচার করেছেন, যা মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
অপরদিকে, তার স্বামী মোহাম্মদ হাছান মাহমুদ পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে অসৎ উদ্দেশ্যে ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রভাব ও আর্থিক সহায়তায় তার স্ত্রীর নামে জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ৫ কোটি ৫২ লাখ ৭৬ হাজার টাকার সম্পদ অর্জন করতে সহায়তা করেন। তার স্ত্রী নূরান ফাতেমার নিজ, যৌথ এবং তার প্রতিষ্ঠানের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে পরিচালিত মোট ৫৬টি হিসাবে মানি লন্ডারিংয়ের সম্পৃক্ত অপরাধ ‘দুর্নীতি ও ঘুষ সংঘটনের মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্থের অবৈধ উৎস গোপন করার উদ্দেশ্যে সেটির রূপান্তর, স্থানান্তর ও হস্তান্তর করে সর্বমোট ৬৮৩ কোটি ১৫ লাখ ৩৭ হাজার ৫৫৪ টাকা অস্বাভাবিক লেনদেনের মধ্যমে ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(১) (ঘ) ও ৫(১) (৪) ধারা লঙ্ঘন করে ৫(২) ধারায় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ এর এর ৪(২) ও৪(৩) ধারায় এবং দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করায় দুর্নীতি দমন কমিশনে মামলা হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে, আসামিদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করতে এবং তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা জারি করা অত্যন্ত জরুরি।