কয়রায় কাবিটা-টিআর প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ

খুলনার কয়রা উপজেলায় গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিটা/কাবিখা) ও রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নিম্নমানের ও পুরাতন ইট ব্যবহার, কাজ না করেই টাকা উত্তোলন, প্রকল্প সাইনবোর্ড না টাঙানোসহ নানা অভিযোগে উত্তাল স্থানীয় জনমত।
উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের দেয়াড়া গ্রামে পিচের রাস্তা থেকে মফিজুলের বাড়ির দিকে ইট সোলিং রাস্তা নির্মাণে চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ দেওয়া হয় দুই লাখ টাকা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ২০০ ফুট দৈর্ঘ্যের রাস্তায় ব্যয় হয়েছে সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা। কোনো সাইনবোর্ড নেই।
স্থানীয়রা জানান, নির্মাণে ব্যবহৃত হয়েছে চার হাজার ইট ও ৬০০ ফুট বালু। প্রকল্প সভাপতি ইউপি সদস্য আব্দুল মান্নান স্বীকার করেন, তিনি শুধু টাকা উত্তোলন করেছেন, কাজটি করেছেন চেয়ারম্যান।
মহারাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জানান, বিভিন্ন সময় এলাকায় কিছু উন্নয়নমূলক কাজ করা হয়। সেগুলো কোনো প্রকল্পে দেখানো হয় না। প্রকল্পের বরাদ্দ থেকে সাশ্রয়কৃত টাকা ওই সকল স্থানের উন্নয়ন ব্যয়ের সাথে সমন্বয় করা হয়।
মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের মোল্লাবাড়ি ওয়াপদা থেকে আব্দুল গফুর মোল্লার বাড়ির দিকে সাড়ে চার ফুট চওড়া রাস্তা নির্মাণে ২ লাখ ১০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও রাস্তার জন্য ব্যবহৃত হয় বেড়িবাঁধ পুরাতন ইট। সেখানে আরও একটি ২০০ ফুটের রাস্তা নির্মিত হয়েছে, যারও কোনো সাইনবোর্ড নেই। খরচ হয়েছে মাত্র ৩০-৩৫ হাজার টাকা। প্রকল্প সভাপতি ইউপি সদস্য মনি শংকরও জানান, কাজটি চেয়ারম্যান করেছেন।
মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ শিকারী পুরাতন ইট ব্যবহারের কথা স্বীকার করে বলেন, বাঁধের ইট চুরি হচ্ছিল, তাই ব্যবহৃত হয়েছে। সাশ্রয়কৃত অর্থ কীভাবে ব্যবহৃত হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী হবে।
বাগালী ইউনিয়নের মিরেপাড়ার একটি রাস্তার নির্মাণে দুই লাখ টাকা বরাদ্দ থাকলেও সেখানে ব্যবহৃত হয়েছে নিম্নমানের ইট। প্রকল্প কর্মকর্তা জানার পর কিছুটা সংশোধন করা হয়। উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের একটি রাস্তায় তিন লাখ টাকা বরাদ্দ থাকলেও ব্যবহার করা হয়েছে পুরাতন ইট।
কয়রা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কাবিটা কর্মসূচিতে ৩ কোটি ৭৮ লাখ ৮৫ হাজার ১৯৫ টাকা, টিআর কর্মসূচিতে ২ কোটি ৮১ লাখ ৩৩ হাজার ১০৫ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এই বরাদ্দে মোট ৩০৭টি প্যাকেজে কাজ চলছে। কাবিখা প্রকল্পে বরাদ্দ রয়েছে ২৭০ মেট্রিক টন চাল ও ২৭০ মেট্রিক টন গম।
প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. মামুনার রশিদ বলেন, নতুন রাস্তা নির্মাণে পুরাতন ইট ব্যবহারের কোনো সুযোগ নেই। কিছু অভিযোগ পেয়েছি, সরেজমিনে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিচ্ছি।