কণ্ঠ পরীক্ষার অভিযোগ ইনুর, আদেশ নিয়েই করা হয় বললেন প্রসিকিউশন

জুলাই-আগস্টে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার শুনানির সময় সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, অসৎ উদ্দেশ্যে কারাগারে আমার কণ্ঠ পরীক্ষা করা হয়েছে। তবে চিফ প্রসিকিউটর বলেছেন, আদেশ নিয়েই কণ্ঠ পরীক্ষা করা হয়।
রোববার (২০ জুলাই) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এমন মন্তব্য করেন ইনু। দুপুরে মামলার শুনানির শুরুতেই হাসানুল হক ইনুর পক্ষে কথা বলার অনুমতি চান আইনজীবী আবুল হাসান।
অনুমতি পেয়ে ইনু বলেন, ‘মাননীয় বিচারক, আমি এ মামলায় অভিযুক্ত। কিন্তু জুন মাসে কারাগারে আমার স্বর বা কণ্ঠ পরীক্ষা করেন কয়েকজন ডিবি কর্মকর্তা। অথচ আমাকে আদালতের কোনো আদেশ দেখানো হয়নি। অতএব, অসৎ উদ্দেশ্য ও চক্রান্তের জন্য এসব করা হয়।’
এই অভিযোগে নাকচ করে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, তদন্তের প্রয়োজনে তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা যেকোনো আসামির কণ্ঠ পরীক্ষা করতে পারেন, জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেন। চিফ প্রসিকিউটর আদেশ দেখিয়ে বলেন, ‘ট্রাইব্যুনালের আদেশ নিয়েই ইনুর কণ্ঠ পরীক্ষা করা হয়েছে।’
জবাবে হাসানুল হক ইনু আসামির ডকে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘কণ্ঠ পরীক্ষা করার সময় আমাকে ট্রাইব্যুনালের আদেশ দেখানো হয়নি।’
এ সময় চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ভয়েস পরীক্ষা করা যেতে পারে। এটি তদন্তের স্বার্থেই করা হয়। মূলত অন্য কণ্ঠের সঙ্গে মেলানোর জন্য পরীক্ষাটি করা হয়। আদালতের আদেশ দেখানোর কোনো এখতিয়ার নেই।’
চিফ প্রসিকিউটর আরও বলেন, ‘আসামি নিজে কেন বার বার কথা বলে বিচার কাজে বিঘ্ন ঘটাচ্ছেন। তিনি তো আইনজীবীর মাধ্যমে তার কথা আদালতে বলতে পারেন।’
এ সময় ট্রাইব্যুনাল বলেন, ন্যায়বিচারের স্বার্থে আমরা আসামির, প্রয়োজনে আসামিদের আত্মীয়-স্বজনেরও কথা শুনব।
পরে জুলাই-আগস্টে মানবতাবিরোধী অপরাধের পৃথক সাত মামলায় সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হক, দীপু মনি, আমির হোসেন আমু, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে তিন মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। আগামী ১৫ অক্টোবর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়।
এদিন জুলাই-আগস্ট আন্দোলন ঘিরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলায় হাসানুল হক ইনুসহ ১৬ জনকে ট্রাইব্যুনালে আনে পুলিশ। এর আগে সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকসহ ৩৯ জনকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। এই ৩৯ জনের মধ্যে সাবেক আমলা ও পুলিশ কর্মকর্তারাও আছেন।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি এই ৩৯ জনসহ মোট ৪৫ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ করতে নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। সেদিন জুলাই-আগস্টে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আনিসুল হক, সালমান এফ রহমান, জুনাইদ আহমেদ পলকসহ মোট ১৬ জনকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
অন্য আসামিরা হলেন, সাবেক মন্ত্রী ফারুক খান, দীপু মনি, আব্দুর রাজ্জাক, শাজাহান খান, কামাল আহমেদ মজুমদার, গোলাম দস্তগীর গাজী, আমির হোসেন আমু, কামরুল ইসলাম, সাবেক উপদেষ্টা তৌফিক-ই ইলাহী চৌধুরী, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক এবং সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব জাহাংগীর আলম।