রংপুরে হিন্দুপাড়ায় হামলার ঘটনায় পুলিশ ও প্রশাসনের বক্তব্য

ধর্ম অবমাননার অভিযোগে রংপুরের গংগাচড়া উপজেলার বেতগাড়ি ইউনিয়নের আলদাদপুর বালাপাড়া গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত হিন্দু পরিবারের সার্বিক অবস্থা পরিদর্শন শেষে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ বিস্তারিত জানিয়েছে।
জেলা প্রশাসক রবিউল ফয়সাল গতকাল সোমবার (২৮ জুলাই) ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে জানান, ২২টি পরিবারের মধ্যে ১৯টি পরিবার বর্তমানে তাদের বাড়িতেই আছে। কটুক্তির অভিযোগে আটক রঞ্জন কুমার রায় এবং তার চাচার পরিবারসহ মোট ৩টি পরিবার পার্শ্ববর্তী গ্রামে আত্মীয়র বাড়িতে রয়েছেন।
তিনি জানান, আজ মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) থেকে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের বাড়িঘর মেরামত করার কাজ শুরু করা হবে। তিনি পরিবারগুলোর সাথে কথা বলেছেন এবং তাদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন।
বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। সেনাবাহিনী ও পুলিশ নিরাপত্তা ব্যবস্থায় নিয়োজিত রয়েছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে রংপুরের পুলিশ সুপার আবু সাইম জানান, হিন্দু পরিবারগুলোর ওপর হামলার ঘটনায় মোট ১২টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই বাড়িগুলোতে ২২টি পরিবার বসবাস করতো।
তিনি জানান, রঞ্জন আটক হওয়ার পর থেকেই তার বাবা, দাদা এবং চাচার পরিবার বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আছেন। অন্য ১৯টি পরিবারের সব পুরুষ সদস্য তাদের নিজ নিজ বাড়িতেই আছেন। ঘরবাড়ি ভাঙ্গা থাকায় কিছু নারী সদস্য মালামাল নিয়ে রিক্সাভ্যান যোগে অন্যত্র চলে গেছে।
স্থানীয় নেতারা ও এলাকায় সম্প্রীতি ফিরিয়ে আনতে প্রশাসন ও পুলিশ এর সাথে কাজ করছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি মেরামত হলে নারী সদস্যরাসহ সবাই নিজ নিজ বাড়িতে ফিরবেন বলে জানান তিনি।
এই হামলার ঘটনায় দায়ীদের শনাক্তকরণের কাজ শুরু হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, যারা অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িত তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, বেতগাড়ি ইউনিয়নের আলদাদপুর বালাপাড়া গ্রামের কিশোর রঞ্জন কুমার রায়ের বিরুদ্ধে ফেসবুকে মহানবী (সা.)-কে নিয়ে অবমাননাকর পোস্ট দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। ওই কিশোর স্থানীয় একটি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। তার বিরুদ্ধে সাইবার সুরক্ষা আইনে মামলা হয়েছে এবং পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে।
এ ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে মাইকে উস্কানি দিয়ে শনিবার রাত ও রোববার বিকেলে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা ও লুটপাট চালানো হয় বলে অভিযোগ উঠে। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে মোতায়েন করা হয়।