জুলাই আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে আহত আনারুলের মানবেতর জীবন

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট। গাজীপুরের চান্দুরা চৌরাস্তা এলাকায় ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছিলেন দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার মো. আনারুল ইসলাম (৩৯)। মিছিলে পুলিশের গুলিতে তিনি গুরুতর আহত হন। এক বছর পেরিয়ে গেলেও শরীরে এখনও রয়েছে ১০টি রাবার বুলেট। অভাবের কারণে নিতে পারছেন না উন্নত চিকিৎসা। থমকে গেছে তার স্বপ্ন, অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে পরিবারের ভবিষ্যৎ।
মো. আনারুল ইসলাম উপজেলার আলোকঝাড়ি ইউনিয়নের চণ্ডীপুর গ্রামের মৃত ইমান আলীর ছেলে। জীবিকার তাগিদে গাজীপুরে ট্রপিক্যাল গার্মেন্টসে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন তিনি। স্ত্রী ও একমাত্র সন্তান নিয়ে চলছিল তার অভাবের সংসার।
পরিবার জানায়, আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন আনারুল। তবে হাসপাতাল থেকে তাকে কোনো চিকিৎসা সনদ বা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেওয়া হয়নি। এরপর দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ একাধিক স্থানে চিকিৎসা নিলেও অর্থের অভাবে তা সম্পূর্ণ রয়ে গেছে। বর্তমানে তিনি বাড়িতে শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন।
আহত আনারুল বলেন, ‘মিছিলে অংশ নিয়েছিলাম বিবেকের তাড়নায়। আজ সেই তাড়নাই আমার জীবন থামিয়ে দিয়েছে। শরীরে এখনও ১০টা গুলি, হাত-পা কাজ করে না। কাজ করতে পারি না, সংসার চালাতে পারি না। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বাঁচা-মরার দোলাচলে আছি। কেউ পাশে দাঁড়ায়নি, কেউ খবরও নেয় না।’
আনারুল জানান, তিনি ‘জুলাই আন্দোলনে’ আহতদের জন্য সরকারের স্বাস্থ্য কার্ডের আবেদন করেছেন, তবে এখনও হাতে পাননি। সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, সেটি প্রক্রিয়াধীন।
আহত আনারুলের ভাই এরশাদ আলী বলেন, ‘শুধু চিকিৎসাই নয়, সংসার চালানোই কষ্ট হয়ে গেছে। জরাজীর্ণ টিনের ঘরে পড়ে আছে আমার ভাই। যদি সরকার বা কোনো সংস্থা সহযোগিতার হাত বাড়াত, তাহলে হয়তো আবারও সে জীবন ফিরে পেত।’
খানসামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. শামসুদ্দোহা মুকুল বলেন, ‘আনারুল আমাদের হাসপাতালে এলে তার এক্স-রেতে মাথা ও পিঠে ১০টি রাবার বুলেটের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। উন্নত চিকিৎসা ছাড়া এসব অপসারণ সম্ভব নয়। পাশাপাশি তিনি মানসিকভাবেও ভেঙে পড়েছেন, যা চিকিৎসার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’
খানসামা উপজেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি আজিজার রহমান বলেন, ‘যারা আন্দোলনে আহত হয়েছেন, তাদের চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। সেই সঙ্গে আনারুলের উন্নত চিকিৎসা জোর দাবি জানাচ্ছি।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুজ্জামান সরকার বলেন, ‘আনারুলের বিষয়টি জানার পর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা সহায়তার চেষ্টা করেছি। এখনও তার শরীরে গুলি রয়েছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আমরা তার উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি আবারও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।’