সংসদে নারী আসন পর্যায়ক্রমে ১০০ করতে একমত দলগুলো

জাতীয় সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব বিষয়ে কোনো কোনো রাজনৈতিক দল নোট অব ডিসেন্ট দেওয়া সত্ত্বেও একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব ক্রমান্বয়ে ১০০ আসনে উন্নীত করার বিষয়ে একমত হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় পর্যায়ের ২২তম দিনের আলোচনার শেষে বুধবার (৩০ জুলাই) সন্ধ্যায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা জানান কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ।
আলী রীয়াজ বলেন, জাতীয় সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব ক্রমান্বয়ে ১০০ আসনে উন্নীত করা হবে, এ বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত। তবে, কোনো কোনো রাজনৈতিক দল সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে এবং কোনো কোনো দল সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতিতে সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচনের পক্ষে।
আলী রীয়াজ আরও বলেন, অবিলম্বে আশু পদক্ষেপ হিসেবে সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব যাতে বৃদ্ধি করা যায়, সেজন্য কতগুলো বিষয়ে কিছু রাজনৈতিক দলের নোট অব ডিসেন্ট (ভিন্নমত) সত্ত্বেও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পেরেছি।
সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধি করতে যে আশু পদক্ষেপ রাখা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে আছে—বিদ্যমান সংরক্ষিত ৫০টি আসন বহাল রেখে সংবিধানের ৬৫(৩) অনুচ্ছেদের প্রয়োজনীয় সংশোধন, জুলাই সনদ স্বাক্ষরের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনে প্রত্যেক রাজনৈতিক দলকে তিনশ আসনের জন্য ন্যূনতম ৫ শতাংশ নারী প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার আহ্বান জানানো এবং পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো ১০ শতাংশ নারী প্রার্থী মনোনয়ন দেবে৷ এই পদ্ধতিতে ন্যূনতম ৩৩ শতাংশ নারী প্রার্থী মনোনয়নের লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত প্রতিটা সাধারণ নির্বাচনে ন্যূনতম ৫ শতাংশ বর্ধিত হারে নারী প্রার্থী মনোনয়ন অব্যাহত রাখা।
সংবিধানে সপ্তদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংরক্ষিত নারী আসনের মেয়াদ ২৫ বছর বৃদ্ধি করা হয়, হিসাব অনুযায়ী তা ২০৪৩ সাল পর্যন্ত বহাল থাকবে৷ তবে প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে ৩৩ শতাংশ নারী প্রার্থিতার লক্ষ্য ২০৪৩ সালের পূর্বেই যদি অর্জিত হয়, তাহলে সপ্তদশ সংশোধনীর মাধ্যমে প্রবর্তিত বিধান নির্ধারিত সময়ের আগেই বাতিল হয়ে যাবে।
এ ছাড়া আলী রীয়াজ জানান, ক্ষমতার ভারসাম্যের জন্যে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্ব বৃদ্ধি করতে সংবিধানের ৪৮(৩) অনুচ্ছেদ সংশোধনপূর্বক কিছু প্রস্তাব রাজনৈতিক দলগুলোকে বুধবার দেওয়া হয়েছে। এসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছালে সংবিধান ও আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনয়নের বিষয়ে আলোচনা করা যেতে পারে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বুধবার আলোচনায় অংশ নেয় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টিসহ ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় এ আলোচনায় কমিশনের সদস্য হিসেবে বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন ও ড. মো. আইয়ুব মিয়া উপস্থিত ছিলেন।