কোটালিপাড়ায় সাংবাদিক নির্মল সেনের জন্মদিন পালন

উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে কোটালীপাড়ায় বিশিষ্ট সাংবাদিক, কলামিস্ট, রাজনীতিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা নির্মল সেনের জন্মদিন পালিত হয়েছে। উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে আজ রোববার (৩ আগস্ট) ৯৫তম জন্মদিনের এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাসুম বিল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় উপজেলা সিনিয়র মৎস্য অফিসার শাহজাহান সিরাজ, উপজেলা বিএনপির সভাপতি এস এম মহিউদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক আবুল বশার হাওলাদার, পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ওলিউর রহমান হাওলাদার, সাংবাদিক এইচ এম মেহেদী হাসানাত, রতন সেন কংকন, মিজানুর রহমান বুলু, গৌরাঙ্গ লাল দাস, মাহাবুব সুলতান, মনিরুজ্জামান জুয়েল, রনী আহম্মেদ বক্তব্য দেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গড়ার জন্য নির্মল সেন সারাটা জীবন লড়াই করেছেন। তিনি সমাজতান্ত্রিক চিন্তা চেতনায় বিশ্বাসী ছিলেন। এই মহান ব্যক্তির স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য উপজেলা প্রশাসন কাজ করে যাবে। বিশেষ করে তার নামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি দাঁড় করানোর চেষ্টা করবো।
উপস্থিত সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে রাজৈর-কোটালীপাড়া সড়কটি সাংবাদিক নির্মল সেন সড়ক নামকরণের দাবি জানানো হয়। আলোচনা শেষে কেক কাটা হয়।
নির্মল সেন ১৯৩০ সালের ৩ আগস্ট গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার দিঘীরপাড় গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম সুরেন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত। মায়ের নাম লাবণ্যপ্রভা সেনগুপ্ত। পাঁচ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে নির্মল সেন ছিলেন পঞ্চম। নির্মল সেনের বাবা সুরেন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত কোটালীপাড়া উপজেলার শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীট সরকারি কোটালীপাড়া ইউনিয়ন ইস্টিটিউশনের গণিত শিক্ষক ছিলেন। এর আগে সুরেন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত ঢাকার ইস্ট বেঙ্গল ইনস্টিটিউটে শিক্ষকতা করতেন।
দেশ বিভক্তির পরে নির্মল সেনের বাবা-মা অন্য ভাই বোনদেরকে নিয়ে কলকাতা চলে যান। জন্মভূমির প্রতি অকুণ্ঠ ভালবাসার কারণে তিনি এদেশে থেকে যান। নির্মল সেন বড় হয়েছেন ঝালকাঠি জেলায় তার পিসির বাড়িতে। তিনি ঝালকাঠি জেলার কলসকাঠি বিএম একাডেমি থেকে ১৯৪৪ সালে মাত্র ১৪ বছর বয়সে ম্যাট্রিক পাস করেন। পিসির বাড়িতে যাওয়ার আগে নির্মল সেন গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার জিটি স্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে এক বছর লেখাপড়া করেন। তিনি বরিশাল বিএম কলেজ থেকে আইএসসি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ ও মাস্টার্স পাস করেন।
নির্মল সেনের রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনের মাধ্যমে স্কুলজীবন থেকে। কলেজ জীবনে তিনি অনুশীলন সমিতির সক্রিয় সদস্য ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি আরএসপিতে যোগ দেন। দীর্ঘদিন তিনি শ্রমিক কৃষক সমাজবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। রাজনীতি করতে গিয়ে নির্মল সেনকে জীবনের অনেকটা সময় জেলে কাটাতে হয়েছে।
১৯৬১ সালে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় লেখালেখির মধ্য দিয়ে নির্মল সেন তার সাংবাদিক জীবন শুরু করেন। তারপর দৈনিক আজাদ, দৈনিক পাকিস্তান, দৈনিক বাংলা পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন। তিনি বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন। এ ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিষয়ে অতিথি শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতা করেছেন।
লেখক হিসেবেও নির্মল সেনের সুনাম রয়েছে। তার লেখা ‘পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ’, ‘মানুষ সমাজ রাষ্ট্র’, ‘বার্লিন থেকে মস্কো’, ‘মা জন্মভূমি’, ‘স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই’, ‘আমার জীবনে ৭১ এর যুদ্ধ’, ‘আমার জবানবন্দি’ উল্লেখযোগ্য ।
নির্মল সেন ২০০৩ সালের ১০ অক্টোবর ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। এর পর দেশে বিদেশে অনেক চিকিৎসার পরে ২০১৩ সালে ৮ জানুয়ারি পরলোকগমন করেন। নির্মল সেনের শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তার মরদেহ বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে দান করা হয়েছে।