আমরা ভুলে যাই, বঙ্গোপসাগরের একটা অংশও আমাদের দেশ : প্রধান উপদেষ্টা

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আমরা প্রায়ই ভুলে যাই যে, বঙ্গোপসাগরের একটা অংশও আমাদের দেশ। এর পরিমাণ আমাদের মোট জমির পরিমাণের চাইতে বেশি। আমরা প্রায় সবসময় জমিভিত্তিক আমাদের অর্ধেক দেশ নিয়ে মাথা ঘামাই। বাকি পানিভিত্তিক অর্ধেক দেশকে হিসেবেই ধরি না। কারণ আমরা ওই অংশে বসবাস করি না। আমরা তো হাওর বাওরেও বসবাস করি না। তাই বলে তো তাকে হিসেবের বাইরে রাখি না। আজ মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এখন থেকে আমাদের অংশের বঙ্গোপসাগরকে আমরা আমাদের দেশের মূল্যবান অংশ, একথা সবসময় মাথায় রেখে অগ্রসর হব। এই অংশের পানির ওপর দিয়ে দেশ-বিদেশের সঙ্গে আমরা বাণিজ্য করব। তার মাধ্যমে আমরা পুরো পৃথিবীকে আমাদের প্রতিবেশি বানাব।
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, এই পানির মধ্যে আছে অফুরন্ত সম্পদ; মৎস্য সম্পদ, যা প্রতি বছর ফসল দেয়। এই পানির নিচে আছে অফুরন্ত গ্যাস। এর সবকিছুকে নিয়েই প্রতিনিয়ত আমাদের চিন্তা-ভাবনাকে চালিত করতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বর্তমান সরকার চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনাকে নতুন করে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছে। সরকার সম্প্রতি বাংলাদেশ নৌবাহিনী পরিচালিত ড্রাই ডক লিমিটেডকে নিউ মুরিং টার্মিনাল কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্ব দিয়েছে। তারা কাজ শুরু করা মাত্রই কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। প্রথম দুই সপ্তাহে দেখা গেছে আগের তুলনায় প্রতিদিন গড়ে ২২৫টি বেশি কনটেইনার হ্যান্ডলিং হচ্ছে। এ বন্দরকে আধুনিকভাবে গড়ে তোলা গেলে তা শুধু বাংলাদেশের অর্থনীতিতেই ভূমিকা রাখবে না, নেপাল, ভূটানসহ পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। বিনিময়ে তারাও উপকৃত হবে, আমরাও উপকৃত হব।
মুহাম্মদ ইউনূস আরও বলেন, আমাদের উপকূল অঞ্চল অফুরন্ত সম্ভাবনার আধার। কুমিরা থেকে টেকনাফ পর্যন্ত নানা বন্দরের কর্মচাঞ্চল্যে সমগ্র উপকূল অঞ্চলকে দক্ষিণ এশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক প্রাণকেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবে। এই পুরো অঞ্চলে অনেকগুলো শিল্পাঞ্চল গড়ে উঠবে শুধু সমুদ্রের সান্নিধ্য এবং তার ব্যবহারের দক্ষতার কারণে। সমুদ্র, উপকূলীয় অঞ্চলের সম্পদ ও পরিবেশের টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করতে আমাদের বন্ধু দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছি এবং তারা উৎসাহ সহকারে সাড়া দিয়েছেন।
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, গভীর সমুদ্রকে আমরা এখনও আমাদের কল্যাণে কাজে লাগাতে পারিনি। একে কেন্দ্র করে আমরা মাছ পালন, আহরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের শিল্প গড়ে তুলতে কাজ শুরু করেছি, এতে করে লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। আমাদের অর্থনীতি নতুন শক্তিতে বলীয়ান হবে।