কাঞ্চন পেয়ারা চাষে বদলে যাচ্ছে চন্দনাইশ ও পটিয়ার কৃষকদের ভাগ্য

চট্টগ্রাম জেলার চন্দনাইশ ও পটিয়া উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় উৎপাদিত কাঞ্চন পেয়ারা বাজারে আসতে শুরু করেছে। আগস্ট মাসের শুরু থেকেই চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে কাঞ্চন পেয়ারা বিক্রি করা হচ্ছে। পেয়ারা চাষিরা এখন বাগান থেকে ফল সংগ্রহ ও ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
এই অঞ্চলের পেয়ারা স্বাদ ও আকারের জন্য বিখ্যাত। চন্দনাইশ ও পটিয়ার প্রায় ৮৩০ হেক্টর পাহাড়ি জমিতে পেয়ারা চাষ হয়, যা প্রতি মৌসুমে প্রায় ৬ কোটি টাকার বেশি বিক্রয় হয়। স্থানীয়রা জানায়, পেয়ারা চাষ বদলে দিয়েছে হাজার হাজার চাষির জীবন এবং বেকারত্ব কমিয়েছে। কাঞ্চননগরসহ আশপাশের পাহাড়ি এলাকায় প্রায় ৭৫০ হেক্টর জমিতে এবং পটিয়ার শ্রীমাই, খরনা ও হাইদগাঁও এলাকায় প্রায় ৮০ হেক্টর জমিতে পেয়ারা চাষ হয়েছে।
কাঞ্চন পেয়ারা প্রধানত চন্দনাইশ উপজেলার কাঞ্চননগর গ্রামের বিশেষ জাত। এখানকার মাটি ও পরিবেশের কারণে পেয়ারা সুস্বাদু হয় এবং অন্য এলাকায় এমন স্বাদ পাওয়া কঠিন। পেয়ারা কোনো কীটনাশক ছাড়াই চাষ হয়, তাই এটি অর্গানিক ফল হিসেবে বিবেচিত। পেয়ারা ছাড়াও স্থানীয় কৃষকরা আম, কাঁঠাল, লিচু, লেবু ও অন্যান্য ফল চাষ করেন।
পেয়ারার মৌসুমে চন্দনাইশ ও পটিয়ার বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ী বাজার বসে, যেখানে পাইকারি ব্যবসায়ীরা পেয়ারা কিনে নিয়ে যান। কৃষি অফিস থেকে নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন ও কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয়। কৃষি কর্মকর্তারা আশা করছেন, যদি জ্যাম-জেলি উৎপাদনকারী ব্যবসায়ীরা চাষিদের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করেন, তাহলে তারা ন্যায্য মূল্য পাবেন।
চাষিরা জানান, কঠোর পরিশ্রম করলে একর প্রতি দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত লাভ সম্ভব, তবে পেয়ারা পচনশীল হওয়ায় দ্রুত বিক্রি করতে হয়। এ জন্য এলাকায় হিমাগার নির্মাণ প্রয়োজন, যা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি।
পটিয়ার খরনা গ্রামের পেয়ারা চাষি রবিউল হোসেন বলেন, ‘এক সময় যেসব জমিতে জুমচাষ হতো বর্তমানে সেখানে সফলভাবে পেয়ারা চাষ হচ্ছে। এ পেয়ারার কদর রয়েছে প্রত্যন্ত এলাকায়। উপজেলা প্রশাসন একটি হিমাগার নির্মাণের কথা বলে এলেও সেটির কোনো অগ্রগতি নেই।’
নগরীর বহদ্দারহাটের ফল ব্যবসায়ী আবদুল হক বলেন, মৌসুমের শুরুতে আসা পেয়ারা একটু বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি ডজন পেয়ারা প্রকারভেদে বর্তমানে খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকায়। প্রতি মৌসুমে চন্দনাইশ ও পটিয়ার শত-শত বেকার যুবক পেয়ারার পুঁটলি নিয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের বিজিসি ট্রাস্ট, রওশনহাট, বাদামতল, খানহাট, গাছবাড়িয়া কলেজ গেইট, বাগিচাহাট, দেওয়ানহাট ও দোহাজারী পৌরসদর পর্যন্ত মহাসড়কের পাশে দাঁড়িয়ে বিক্রি করেন। সেখান থেকে আমরা পাইকারি কিনে এনে নগরের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করি।