কুষ্টিয়ায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি, ২১ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ

ভারি বর্ষণ আর ফারাক্কার বিরূপ প্রভাবে কুষ্টিয়ায় পদ্মা ও গড়াই নদীর পানি বেড়েই চলেছে। পদ্মার হর্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে বিপৎসীমার চেয়ে ৮৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পানি। এদিকে পানি বাড়ার সাথে সাথে প্লাবিত হচ্ছে নিম্নাঞ্চল। বিশেষ করে জেলার দৌলতপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী চারটি ইউনিয়নের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ইতোমধ্যে ২১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছেন স্থানীয় প্রশাসন।
টানা বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা ঢলে গত ২ আগস্ট থেকে কুষ্টিয়ার পদ্মা ও গড়াই নদীর পানি ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে। পদ্মায় পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে প্লাবিত হচ্ছে নিম্নাঞ্চল। বিশেষ করে জেলার দৌলতপুর উপজেলার নদী তীরবর্তী রামকৃষ্ণপুর, চিলমারি, মরিচা ও ফিলিপনগর এই ৪ ইউনিয়নের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। একবাড়ি থেকে আরেক বাড়ি যাতায়াতের জন্য নৌকা বা ভেলা ব্যবহার করতে হচ্ছে তাদের। একে একে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ২১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রায় এক হাজার হেক্টর জমির মরিচ, কলা, ধানসহ বিভিন্ন ধরনের ফসলের ক্ষেতে পানি ঢুকে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শিশু, বৃদ্ধ, হাঁস-মুরগি আর গবাদিপশু নিয়ে চরম মানবেতর জীবনযাপন করছে বানভাসি মানুষ।
এছাড়া পদ্মার পানি বাড়ার কারণে ভেড়ামারা উপজেলার জুনিয়াদহ ও বাহাদুরপুর ইউনিয়নের বেশকিছু অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
চিলমারী ইউনিয়নের সাবেক সদস্য শেখ নুরুজ্জামান জানান, প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকায় পানি প্রবেশ করছে। বন্যার্ত মানুষ চরম দুর্ভোগের মধ্যে দিন যাপন করছেন। বন্যা দীর্ঘায়িত হলে বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য সংকট দেখা দেবে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় পরিবারগুলোকে দ্রুত সহায়তা করা দরকার।
মরিচা ইউনিয়নের ভূরকাপাড়া গ্রামের জামিরুল ইসলাম বলেন, পদ্মায় পানি বৃদ্ধির ফলে গ্রামের হাজার হাজার মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। কেননা নদীর পাড়ের ব্যাপক অংশ অরক্ষিত রয়েছে। যে কোন সময় পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ জন্য জরুরি ভিত্তিতে নদীর অরক্ষিত পাড় রক্ষা করা জরুরি।

চিলমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর তালিকা তৈরি করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে জমা দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন, চরাঞ্চলের প্রায় এক হাজার হেক্টর জমির মরিচ, রোপা আউশ, কলা, বিভিন্ন ধরনের সবজি, ভুট্টা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করা হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মতো পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
এদিকে দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল হাই সিদ্দিকী বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করে বন্যার্তদের মাঝে খাদ্য সহায়তা দিয়েছেন। দুর্যোগ মোকাবিলায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাশিদুর রহমান জানান, পদ্মার হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানি (আজ শুক্রবার দুপুর ১টা পর্যন্ত) বিপৎসীমার ৮৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আপাতত কয়েকদিন পানি বাড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। সার্বক্ষণিক বন্যা পরিস্থিতির ওপর নজর রাখা হচ্ছে।