জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষরের জন্য প্রস্তুত বিএনপি : সালাহউদ্দিন আহমেদ

জুলাই জাতীয় সনদ, ২০২৫ এ স্বাক্ষর করার জন্য বিএনপি প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ।
আজ রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠক শেষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন সালাহউদ্দিন আহমেদ।
বিএনপিনেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষরের জন্য প্রত্যেক দলের কাছে দুজন প্রতিনিধির নাম চাওয়া হয়েছিল, আমরা সেটি জমা দিয়েছি। আমরা জুলাই জাতীয় সনদের স্বাক্ষরের জন্য প্রস্তুত। আমরা এর আগেও আমাদের সেই অবস্থানটা ব্যক্ত করেছি।
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার আলোচনার মাধ্যমে যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে এবং এর মধ্যে থেকে যা যা সনদে অন্তর্ভুক্ত হবে, সে সনদ বাস্তবায়নের জন্য স্বাক্ষরিত হবে, এ বিষয়ে নিজের আশাবাদ ব্যক্ত করে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রায় সবগুলো রাজনৈতিক দলই কীভাবে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করা যায় সে বিষয়ে তাদের মতামত দিয়েছে, আমরাও দিয়েছি। আমরা এটিও বলেছি, এর বাইরেও যদি কোনো বৈধ, আইনানুগ, সাংবিধানিক পন্থা থাকে তবে আমরা তা মেনে নেব।
বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘আমরা এমন কোনো খারাপ নজির স্থাপন করতে চাই না, যেটার মধ্যে দিয়ে সংবিধানের সংশোধনী আনয়নের জন্য কোনো অতিরিক্ত বা বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ বা প্রোক্লেমেশনের মধ্য দিয়ে আইনি ক্ষমতার বাইরে সংবিধান সংশোধন ও পরিবর্তনের কোনো নজির সৃষ্টি হোক।’
আজ রোববার দুপুরে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভায় উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সভাপতি ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আজকের সভায় নিজের কথোপকথনের কথা উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার কাছেও আমি আহ্বান জানিয়েছি, আপনি বিচার বিভাগের পরামর্শ নিতে পারেন। এই সনদ বাস্তবায়নের জন্য আইনি কি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা যেতে পারে, সে বিষয়ে আপনি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সঙ্গে পরামর্শ করতে পারেন। অথবা এর বাইরে যদি কোনো আইনানুগ ও বৈধ প্রক্রিয়া থাকে, তাহলে তাতেও আমরা একমত হব। কিন্তু যে জুলাই সনদ আমরা জাতীয় ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে প্রণয়ন করছি, একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দলিল, সাংবিধানিক দলিল, এই দলিলটাকে যাতে আমরা জাতির কাছে প্রশ্নাতীতভাবে বাস্তবায়ন করতে পারি, ভবিষ্যতে যেন এটা বিচারিক চ্যালেঞ্জ করতে না হয়, সেজন্য এ বিষয়ে একটি পদ্ধতি নির্ধারণ করার জন্য সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করার আহ্বান জানিয়েছি।’
সালাহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, ‘আমি প্রধান উপদেষ্টার কাছে আমার দ্বিতীয় মতামত ব্যক্ত করেছি, যেন দরকার হলে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ছোট ছোট মিটিং করে কীভাবে এই সনদ বাস্তবায়ন করা যায় সে বিষয়ে সবাইকে ঐকমত্যে আনতে পারেন। সে বিষয়ে আপনার এখতিয়ার আছে। আপনি আহ্বান জানালে আমরা সবসময় আসি এবং আসব।’
কমিশনের সঙ্গে অধিকতর আলোচনা প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমাদের আলোচনা আরও চলবে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ আগামীকাল শেষ হবে, উনারা আশা করছেন সেটা আরও বৃদ্ধি করা হবে। তাহলে বুধবার আবার আলোচনা হবে এবং আমরা চাই আলোচনা টেবিলের সব নিষ্পত্তি হোক।’
নির্বাচন নিয়ে সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা জোর দিয়ে বলেছি, আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অবশ্যই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে এবং এটার কোনো বিকল্প নেই। নির্বাচন কোনো কিছুর ওপরে নির্ভরশীল নয়। সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন এগুলো মিউচুয়ালি ইন্ডিপেন্ডেন্ট কোনো বিষয় নয়। নির্বাচন হতেই হবে, সংস্কার চালু থাকবে, বিচার কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। এগুলো কোনোটার ওপরই কোনোটা নির্ভরশীল নয়।’
সালাহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, ‘নির্বাচনের সময় এ বিষয়ে এই জাতির মধ্যে যে ঐক্য সৃষ্টি হয়েছে, নির্বাচনের সময় ঘোষণা করা হয়েছে, নির্বাচন কমিশনও তাদের প্রস্তুতি শেষ করেছে, আমাদের দীর্ঘদিনের যে সংগ্রাম ভোটাধিকার প্রয়োগের আন্দোলন, যার জন্য আমরা রক্ত দিয়েছি—সেই ভোটাধিকার প্রয়োগের মধ্য দিয়েই একটি প্রকৃত গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সরকারের প্রতিষ্ঠা হবে, সংসদ প্রতিষ্ঠা হবে, তার মধ্য দিয়ে আমাদের সমস্ত গণতান্ত্রিক অধিকারগুলো আমরা বাস্তবায়ন করব, ইনশাআল্লাহ।’
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আজ রোববার দুপুর তিনটায় আলোচনায় বসে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
এতে কমিশনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান ও ড. মো. আইয়ুব মিয়া। এ ছাড়া জাতীয় ঐকমত্য গঠন প্রক্রিয়ায় যুক্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার সভায় অংশগ্রহণ করেন।