ঈশ্বরদীতে একাডেমিক সুপারভাইজারের বিরুদ্ধে গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ

পাবনার ঈশ্বরদীতে শিক্ষা কার্যক্রম তদারকিতে দায়িত্ব পালনে অবহেলার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার আরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী একাডেমিক সুপারভাইজারের দায়িত্ব হলো বিদ্যালয় ও মাদরাসায় পাঠদানের মান যাচাই, শিক্ষকদের পাঠ পরিকল্পনা পর্যালোচনা, সমাবেশ ও ক্লাস কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ, শিক্ষকদের ডায়েরি অনুসরণ নিশ্চিতকরণসহ সামগ্রিক শিক্ষা কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে কিনা, তা নজরদারি করা। তবে অভিযোগ রয়েছে, আরিফুল ইসলাম নিয়মিত এসব প্রতিষ্ঠানে যান না; বছরে এক দু’বার গিয়ে শুধু খাতাপত্রে স্বাক্ষর করেই দায়িত্ব এড়িয়ে চলেন।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, ঈশ্বরদী উপজেলায় বর্তমানে ৪৫টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ১৮টি মাদরাসা রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে তদারকির জন্য আরিফুল ইসলামকে সরকারি মোটরসাইকেল ও জ্বালানি ভাতা দেওয়া হলেও তিনি বিদ্যালয়ে খুব কমই উপস্থিত হন। স্থানীয় শিক্ষকরা অভিযোগ করে বলেন, মাসের পর মাস তাকে দেখা যায় না, এমনকি গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী পরিস্থিতিতেও কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেননি তিনি।
স্থানীয়রা আরও অভিযোগ করেন, এ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নির্বাচন পরিচালনা ম্যানুয়্যালে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, নির্বাচন পরিচালনার জন্য প্রথম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে হবে। তবে প্রকল্পভুক্ত কর্মকর্তা হয়েও আরিফুল ইসলাম নানা কৌশলে ওই দায়িত্ব নিচ্ছেন। এতে শুধু আইনগত প্রশ্নই তৈরি হয়নি, বরং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছ কার্যক্রম নিয়েও দেখা দিয়েছে বিভ্রান্তি।
উপজেলার কয়েকজন প্রধান শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, একজন একাডেমিক সুপারভাইজারের মূল দায়িত্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে বাস্তব চিত্র পর্যবেক্ষণ করা। তবে আরিফুল ইসলাম বিদ্যালয়ে না গিয়ে অফিসে বসে দ্বায়িত্ব পালন না করে সময় পার করছেন। এতে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মান উন্নত হচ্ছে না, বরং ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
আরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, অফিসে বসার পরিবর্তে তিনি প্রায় সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে অবস্থান করেন এবং উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের প্রোগ্রামের নেতৃত্ব দেওয়া ছাড়াও অতি-উৎসাহী হয়ে সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
স্থানীয় শিক্ষাবিদ ও সচেতন মহলের অভিযোগ, একাডেমিক সুপারভাইজার আরিফুল ইসলামের দায়িত্বহীনতা ও অনিয়মে ঈশ্বরদীর শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এতে শিক্ষার পরিবেশ ও শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দ্রুত তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং অবিলম্বে তাকে ঈশ্বরদী থেকে প্রত্যাহার দাবি জানান তারা ।
এসব অভিযোগের বিষয়ে একাডেমিক সুপারভাইজার আরিফ বলেন, ‘এটাই আমার কাজ। যা কাজ, সেটাই আমি করি। যার যার চরকায় তেল দিতে হয়। নিজের চর্কায় আমি তেল নিই। যারা অভিযোগ দেয়, তারা অভিযোগই করুক। তাদেরকে এসব অভিযোগ ধুয়ে মুছে পানি খেতে বলেন।’
এসব বিষয়ে ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি গঠনে তাকে (আরিফুল ইসলাম) প্রিসাইডিং অফিসারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কিনা, তা আমার জানা নেই। এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারছি না, তবে প্রয়োজন হলে দেখে জানাতে পারব। যদি তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়ে থাকে, পরবর্তীতে কোনোভাবে যেন তা না হয়, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’