অগ্নিসংযোগের দায় বিএনপি-জামায়াতের ওপর চাপাতে বলেছিলেন শেখ হাসিনা
জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থান চলাকালে বিভিন্ন সরকারি ভবনে অগ্নিসংযোগের দায় বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর ওপর চাপানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর সঙ্গে ফাঁস হওয়া এক কলরেকর্ডে এ তথ্য উঠে এসেছে। এসময় এ ধরনের সংবাদ বিদেশি মিডিয়ায় প্রচারেরও নির্দেশ দেন হাসিনা।
গত বছরের ২৪ জুলাই শেখ হাসিনা ও নসরুল হামিদ বিপুর ওই ফোনালাপের কলরেকর্ডটি এনটিভির হাতে এসেছে। পাঠকদের জন্য ফোনালাপটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
ফোনালাপে নসরুল হামিদ বিপু বলেন, জ্বালানি বিল নিয়ে আর কোনো সমস্যা নাই। একদিনে কাভার করে ফেলছি ২৪ লাখ।
শেখ হাসিনা বলেন, ২৪ লাখ! তাহলে এটা নিউজ করো।
উত্তরে বিপু বলেন, করছি তো। সকাল থেকে সমস্ত সাংবাদিক নিয়ে পুরো ঢাকার শহর ঘুরছি।
হাসিনা বলেন, কই একবারও তো ক্যামেরায় দেখলাম না।
বিপু বলেন, আরে দেখাবেন কেমনে! কালকে আমি জোর করে বললাম, এতগুলো ছবি তুললা একটাও তো দেখাইলা না।
হাসিনা বলেন, আমি যা বলি শুনো, থোরাসা হাদিয়া দে দো।
বিপু বলেন, হু ঠিকাছে। ওইটা আমি মাথায় রাখছি। আজকে ডাইকা আমি বলছি। হইছে কি আমি বিএনপি-জামায়েত সন্ত্রাসী কথা যেটা বলছি ওইটা কাইটা দিয়ে বাকি কথা রাখতেছে।
উত্তরে হাসিনা বলেন, কাটলে বলবা তোদের বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেব।
বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় অগ্নিসংযোগের দায় বিএনপি-জামায়াতের ওপর দেওয়ার ষড়যন্ত্রও করেন শেখ হাসিনা।
ফোনে হাসিনাকে বলতে শোনা যায়, শিবির আর ছাত্রদল মিলেই যে (অগ্নিসংযোগ) করছে, মানে বিএনপি-জামায়েত যে করছে, এটা বারবার বলতে হবে, লিখতে হবে। আর বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করো। কারণ বিদেশে খবর যাচ্ছে ছাত্রলীগ এসব করছে। ছাত্রলীগ তো মাইর খেয়ে বের হয়ে চলে আসছে। তাদের তো কিচ্ছু নাই, কাপড়চোপড় নাই। বলে, আপা আমরা এক কাপড়ে।
এদিকে গতকাল সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা তানভীর জোহা বলেন, জুলাই আন্দোলন দমনে দেওয়া নির্দেশনা গোপন করতে গত বছরের ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চারটি ফোন নম্বরের প্রায় এক হাজার কল রেকর্ড মুছে ফেলা হয়েছে।
তানভীর জোহা আরও বলেন, ওইদিন সন্ধ্যায় ন্যাশনাল টেলিকম মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি)-এর সার্ভার থেকে কলরেকর্ড ও মালিকানার তথ্য মুছে ফেলতে নির্দেশ দেন সংস্থাটির তৎকালীন মহাপরিচালক জিয়াউল আহসান। লোক পাঠিয়ে সার্ভার থেকে এসব তথ্য সরানো হয়। বর্তমানে ডিজিটাল প্রমাণ উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
তদন্ত কর্মকর্তা আরও জানান, শুধু শেখ হাসিনার নয়, একই সময়ে সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন এবং সাবেক এক পরিকল্পনা মন্ত্রীর কল রেকর্ডও মুছে ফেলা হয়।