রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনই একমাত্র শান্তিপূর্ণ সমাধান : প্রধান উপদেষ্টা

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মিয়ানমার ও আরাকান সেনাবাহিনীর ওপর কার্যকর চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের দ্রুত এবং নিরাপদ প্রত্যাবাসন শুরুর আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি এটিকে এ সংকটের একমাত্র শান্তিপূর্ণ সমাধান হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি বিষয়ক উচ্চ-স্তরের সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। তিনি জানান, রোহিঙ্গা সংকটের উৎপত্তি মিয়ানমারে ও এর সমাধান সেখানেই নিহিত।
প্রধান উপদেষ্টা তাঁর বক্তব্যে বলেন, গণহত্যা শুরু হওয়ার আট বছর পরও রোহিঙ্গাদের দুর্ভোগ অব্যাহত রয়েছে। সংকট নিরসনে আন্তর্জাতিক উদ্যোগের অভাব ও তহবিলের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, তহবিল হ্রাস পাওয়ায় ও দীর্ঘমেয়াদি আশ্রয় প্রদানের চেয়ে রোহিঙ্গাদের বাড়ি ফিরে যাওয়াই এখন একমাত্র শান্তিপূর্ণ সমাধান। তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা ধারাবাহিকভাবে তাদের প্রত্যাবাসনের ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ হিসেবে যারা সম্প্রতি সংঘাত থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে তাদের প্রত্যাবাসনের অনুমতি দিতে হবে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ এই গভীর সংকটের শিকার। এর জন্য বিশাল আর্থিক, সামাজিক ও পরিবেশগত মূল্য বহন করতে বাধ্য হচ্ছে। তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন, রাখাইন থেকে মাদকের প্রবাহসহ অন্যান্য অপরাধমূলক কার্যকলাপ বাংলাদেশের সামাজিক কাঠামোকে হুমকির মুখে ফেলেছে। দেশের অভ্যন্তরীণ বেকারত্ব ও দারিদ্র্যের মতো উন্নয়নমূলক চ্যালেঞ্জগুলির কারণে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের তার অভ্যন্তরে কর্মসংস্থানের অনুমতি দিতে পারছে না।
রোহিঙ্গা সংকটের একটি টেকসই সমাধানের লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি সাতটি পদক্ষেপ বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাব রাখেন-
রাখাইনকে যুক্তিসংগতভাবে স্থিতিশীল করার মাধ্যমে নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের জন্য একটি বাস্তব রোডম্যাপ তৈরি করা।
রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধ করতে ও টেকসই প্রত্যাবাসন শুরু করার জন্য মিয়ানমার এবং আরাকান সেনাবাহিনীর ওপর কার্যকর চাপ প্রয়োগ করা।
রাখাইনকে স্থিতিশীল করার জন্য আন্তর্জাতিক সমর্থন একত্রিত করা, স্থিতিশীলতা পর্যবেক্ষণে আন্তর্জাতিক বেসামরিক উপস্থিতি স্থাপন করা।
রাখাইন সমাজ ও শাসনব্যবস্থায় রোহিঙ্গাদের টেকসই একীকরণের জন্য আস্থা তৈরির ব্যবস্থাগুলিকে সমর্থন করা।
যৌথ প্রতিক্রিয়া পরিকল্পনার সম্পূর্ণ অর্থায়নের জন্য দাতাদের অবদান একত্রিত করা।
জবাবদিহিতা এবং পুনরুদ্ধারমূলক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।
মাদক-অর্থনীতি নির্মূল ও আন্তঃসীমান্ত অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াই করা।
প্রধান উপদেষ্টা দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, রোহিঙ্গাদের ঘরে ফেরা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবিলম্বে পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি সব দেশকে এই সংকট চিরতরে সমাধানের জন্য একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার করার আহ্বান জানান ও আশ্বাস দেন, এই লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশ তার পূর্ণ সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত।