মুন্সীগঞ্জ হবে দেশের সর্ববৃহৎ অর্থনৈতিক অঞ্চল : গভর্নর

রাজধানীর অদূরে অবস্থান এবং ঐতিহ্যগত কারণে মুন্সীগঞ্জ একটি ব্যাপক সম্ভাবনাময় এলাকা বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান। তিনি বলেন, নির্মাণাধীন, বহুল আকাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতু চালু হলে এ জেলা হবে দেশের সর্ববৃহৎ অর্থনৈতিক অঞ্চল। অচিরেই এখানে রেল চালু হবে। আজ শনিবার মুন্সীগঞ্জ শিল্পকলা একাডেমিতে জেলা প্রশাসক ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘জয়ী মুন্সীগঞ্জ, জয়ী বাংলাদেশ’ শীর্ষক কীর্তিমান মানুষের সম্মাননা অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন গভর্নর।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর বলেন, ‘মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসনের মতো বাংলাদেশের অন্য কোনো জেলায় এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে কি না তা আমার জানা নেই। আমি মনে করি, এটি একধরনের প্রণোদনা, যা সংশ্লিষ্ট সবার মধ্যে ইতিবাচক প্রতিযোগিতা তৈরি করে।’
ড. আতিউর রহমান বলেন, ‘দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নকে গতিশীল রাখতে মুন্সীগঞ্জ জেলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। জেলার বাউশিয়ায় পোশাক শিল্পপল্লী গড়ে উঠছে। এখানে ঢাকার পোশাকশিল্প কারখানাগুলো ক্রমান্বয়ে স্থানান্তরিত হবে।’
গভর্নর আরো বলেন, ‘প্রতিটি জেলার জেলা প্রশাসকের অধীনে জেলা কৃষিঋণ কমিটি দায়িত্ব পালন করে থাকে। মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসন তার আওতাধীন অঞ্চলের ব্যাংকগুলোর কৃষিঋণ বিতরণের শতভাগ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, কৃষিঋণ সম্প্রসারণ, আমদানিনির্ভর ফসল ও মসলা চাষে ৪ শতাংশ এবং দুগ্ধজাত গাভী পালনে ৫ শতাংশ রেয়াতি সুদহারে ঋণ বিতরণ, আদায়যোগ্য কৃষি আদায় এসব বিষয় তদারকির জন্য নিয়মিত জেলা কৃষিঋণ কমিটির সভা করবে বলে আমি আশা করি। কৃষি ও এসএমই ঋণ পেতে যাতে কৃষক এবং ক্ষুদ্র ও নারী উদ্যোক্তাদের হয়রানির শিকার হতে না হয় সেটিও দেখবে এই জেলা প্রশাসন। ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রমের দেখভালও জেলা প্রশাসন করে থাকে। এ ক্ষেত্রে আমার পরিচালনাধীন এমআরএ (মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি) প্রায়ই জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা পেয়ে থাকে। এভাবে দেশের প্রতি জেলা প্রশাসন আর্থসামাজিক উন্নয়নে অনন্য ভূমিকা পালন করলে সত্যিই একদিন গড়ে উঠবে সুখী, সমৃদ্ধ ও ডিজিটাল বাংলাদেশ।’
এ অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের স্থানীয় সংসদ সদস্য মৃণাল কান্তি দাস, ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. আবু বকর সিদ্দিক, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনিসুজ্জামান আনিস, সাপ্তাহিক অর্থনীতির সম্পাদক জাহিদুজ্জামান ফারুক প্রমুখ। এ অনুষ্ঠানে জেলায় অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনের জন্য চারজন, শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে সাফল্যের জন্য পাঁচজন এবং সমাজ উন্নয়নে ভূমিকা রাখার জন্য চারজনকে সম্মাননা দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, ‘আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে আমরা ইউরোপের মতো বেঁধে ফেলা কানেকটিভিটি চালু রাখতে পারলে ২০২১ সালে মধ্য আয়ের দেশ, ২০৩০ সাল নাগাদ উচ্চ মধ্য আয়ের দেশ এবং ২০৪০ সাল নাগাদ আমরা উন্নত দেশে উন্নীত হব।’
গভর্নর বলেন, ‘রাজনৈতিক অস্থিরতা না থাকলে আমরা কাঙ্ক্ষিত ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারতাম। বাংলাদেশের টাকার মূল্যমান এ অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে স্থিতিশীল রয়েছে। এ বছর শেষে বাংলাদেশের রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়াবে ২৫ বিলিয়ন ডলারে, যা দিয়ে ছয় থেকে সাত মাসের আমদানি আমরা করতে পারব। মূল্যস্ফীতি কমতে শুরু করেছে। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার বিচারে আমাদের অর্জন শতভাগ।’