মোবাইল ফোনসেট আমদানির ওপর কর কমানোর আহ্বান

ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে এবং দেশের উন্নয়নের স্বার্থে মোবাইল ফোনসেট আমদানির ওপর কর হ্রাস করতে হবে। বর্তমানে মোবাইল ফোনসেট আমদানির ওপর কর, মূসক ও সারচার্জ মিলে ২১ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এটি প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ৫ থেকে ১০ শতাংশ করতে হবে। সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশের মোবাইল হ্যান্ডসেট আমদানিকারকদের সংগঠন বিএমপিআইএ।
সংগঠনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ‘বাজেটোত্তর আলোচনা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে বিএমপিআইএর নেতারা সরকারের দিকনির্দেশনাপূর্ণ বাজেটকে (২০১৫-২০১৬ অর্থবছর) স্বাগত জানান। তবে নেতারা মোবাইল ফোনসেট আমদানিতে কর বাড়ানোর প্রতিবাদ করে বলেন, এ বছরের বাজেটে দেশের মোবাইল হ্যান্ডসেট বাজারে স্বস্তিমূলক কোনো বার্তা আসেনি। প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মোবাইল ফোনসেট আমদানির ওপর কর, মূসক ও সারচার্জ কমাতে হবে। আর কর হ্রাস না করা হলে চোরাইভাবে মোবাইল ফোনসেট আমদানি বাড়বে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএমপিআইএর সভাপতি রুহুল আলম আল মাহবুব, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি রাকিবুল কবীর, সাধারণ সম্পাদক রেজওয়ানুল হক, যুগ্ম সম্পাদক মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দীন, কোষাধ্যক্ষ এ টি এম মাহবুবুল আলম, পরিচালক সালাহউদ্দীন আলমগীর প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে বিএমপিআইএর নেতারা বলেন, বর্তমানে ব্যাপকহারে আন্ডার ইনভয়েসিং, চোরাই পথে মোবাইল ফোনসেট আমদানি রোধে দেশের কম্পিউটার শিল্পের মতো মোবাইল হ্যান্ডসেটেও একটি সহজ ও সহনীয় শুল্ক নীতিমালা দেশের সার্বিক উন্নয়নে প্রভাব রাখবে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, নীতিমালার আলোকে বাংলাদেশে বর্তমানে ১২ কোটি ৩৩ লাখ মোবাইল ফোনের গ্রাহক তথ্যপ্রযুক্তির আওতায় এসেছে। এ ছাড়া বর্তমানে চার কোটিরও বেশি বাংলাদেশের মানুষ ইন্টারনেট সেবা ব্যবহার করছে। যার মধ্যে ৯৫%-এর বেশি গ্রাহক মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। সরকারের ‘তথ্য বাতায়ন’ প্রযুক্তির মাধ্যমে দেশের যেকোনো স্থানে বসে এই ওয়েব পেজে দেওয়া সব তথ্যসেবা পেতে পারেন। এই সেবাগুলো দেশের জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় মাধ্যম হছে সাশ্রয়ী স্মার্টফোন এবং মোবাইল অপারেটরদের দেওয়া থ্রিজি ইন্টারনেট সেবা ।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, পূর্ববর্তী বছরগুলোর কর ও বৈধ আমদানির পরিমাণ বিশ্লেষণে দেখা যায়, কর সহনীয় পর্যায়ে থাকলে অবৈধ আমদানি হ্রাস পায়। মোবাইল ফোনসেট সহজেই বহনযোগ্য হওয়ায় কর বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গেই অবৈধ আমদানির প্রবণতা বাড়ে।
২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে করের আওতা বৃদ্ধির ফলে দেখা গেছে, প্রতি তিন মাসে আমদানি নিম্নমুখী হয়েছে। বিগত ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সরকার মোবাইল ফোনসেট আমদানির ওপর করের পরিমাণ ১০% এর পরিবর্তে ২১.৭৫% (৫% কর + ১৫% মূসক + ১% সারচার্জ) আরোপ করা হয়েছে। এর ফলে বিগত ৩ কোয়ার্টারে আমদানির ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব দেখা গেছে। ২০১৪ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বর এই তিন মাসে মোবাইল ফোনসেট আমদানি হয়েছে ৮২ লাখ ১৪ হাজার ৫৪৩টি, যার মূল্য ১৭ কোটি ৫২ লাখ মার্কিন ডলার। পরবর্তী অক্টোবর-ডিসেম্বর এই তিন মাসে আমদানি হয়েছে ৬৭ লাখ ৮৮ হাজার ৯৫২টি যার মূল্য ১০ কোটি ৭২ লাখ মার্কিন ডলার। আর চলতি বছর জানুয়ারি-মার্চ এই তিন মাসে আমদানি হয়েছে ৫১ লাখ ১১ হাজার ৪২২টি যার মূল্য ১০ কোটি ২৮ লাখ মার্কিন ডলার। তথ্যগুলো বিএমপিআইএর।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, স্মার্টফোন তথ্যপ্রযুক্তিকে আরো সহজলভ্য করা সত্ত্বেও আমদানিতে নিম্নমুখী প্রবণতা লক্ষণীয়। ধরে নেওয়া যায় বাড়তি মূল্য ভোক্তাদের র্স্মাটফোন ব্যবহারে বিমুখ করেছে অথবা অবৈধ পথে বেশি পণ্য আমদানি হচ্ছে। আর অবৈধ আমদানির কারণে বিপুল রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
স্মার্টফোন আমদানির তথ্যে দেখা যায়, ২০১৪ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বর এই তিন মাসে আমদানি হয়েছে ১৭ লাখ ৩১ হাজার ৮৮৪টি ফোনসেট। পরবর্তী অক্টোবর-ডিসেম্বর এই তিন মাসে আমদানি হয়েছে আট লাখ ৮০ হাজার ৩৭২টি। আর চলতি বছর জানুয়ারি-মার্চ এই তিন মাসে আমদানি হয়েছে আট লাখ ৬৭ হাজার ৫৩৩টি। তথ্যগুলো বিএমপিআইএর।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যতম একটি সম্ভাবনাময় শিল্প হচ্ছে 'সফটওয়ার ও অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপার'। স্মার্টফোন ব্যবহার না বাড়লে এই শিল্পের প্রসার হবে না।