রোহিঙ্গাদের তথ্যভাণ্ডার করছে সরকার

দুই হাজার তিন কোটি টাকা ব্যয়ে সাতটি প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এর মধ্যে রয়েছে ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও সিলেট নগরীতে ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব ও ক্ষয়ক্ষতি কমাতে একটি উন্নয়ন প্রকল্প। আরো রয়েছে বাংলাদেশে অবস্থানকারী অনিবন্ধিত মিয়ানমার নাগরিকদের তথ্যভাণ্ডার (ডেটাবেইস) তৈরির প্রকল্প।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক সভায় এসব প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা সভায় সভাপতিত্ব করেন।
সভায় মন্ত্রিপরিষদের সদস্যসহ ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভা শেষে পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশে অবস্থানকারী অনিবন্ধিত মিয়ানমার নাগরিকদের ডেটাবেইস তৈরি সম্পর্কে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, অনিবন্ধিত মিয়ানমার নাগরিকদের ছবি ও সাধারণ তথ্যসম্বলিত ডেটাবেইস তৈরির কাজ এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। পরিসংখ্যান ব্যুরো ২০১৬ সালের মধ্যে এ কাজ সম্পন্ন করবে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।
মন্ত্রী বলেন, এ শুমারির মধ্য দিয়ে অনিবন্ধিত মিয়ানমার নাগরিকদের বর্তমান অবস্থান এবং বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের আগে তাদের মূল বাসস্থানের ঠিকানা সম্পর্কে জানা যাবে এবং এর মাধ্যমে তাদের জন্য পরিকল্পনা প্রণয়নও সম্ভব হবে।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, দুর্যোগের সময় জানমালের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনার লক্ষ্যে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান যাতে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে সে লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানগুলোর সামর্থ্য ও দক্ষতা বাড়ানোর জন্য মূলত ‘আরবান রেজিলিয়েন্স প্রজেক্ট’ গ্রহণ করা হয়েছে।
রেজিলিয়েন্স প্রজেক্টকে গুরুত্বপূর্ণ আখ্যা দিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ভূমিকম্প ঠেকাতে পারি না, তবে এর ক্ষতির পরিমাণ যাতে কম হয় সে ব্যবস্থাপনা করতে পারি। এ জন্যই প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।’
রাজউক, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর ও পরিকল্পনা কমিশন যৌথভাবে ২০২০ সালের জুন নাগাদ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।
প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয়ের মধ্যে সরকারি কোষাগার থেকে ৬৫২.৮৩ কোটি টাকা, প্রকল্প সাহায্য থেকে ১৩৩২ কোটি এবং অবশিষ্ট ১৮.১৪ কোটি টাকা সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেওয়া হবে। এই সাতটি প্রকল্পই নতুন।
অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান ব্রিফিংকালে উপস্থিত ছিলেন।
প্রকল্পের আওতায় রাজউক ঝুঁকি-সংবেদনশীল ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা প্রণয়নের মাধ্যমে শহরের ভূমি জোনিং করে এলাকাভিত্তিক ভবন নির্মাণের উচ্চতা নির্ধারণ করে দেবে। পাশাপাশি এসব শহরে পুকুর ভরাট করে আর কোনো স্থাপনা তৈরি না করা এবং বিল্ডিং কোড অনুসরণের বিষয়েও তদারকি করবে রাজউক।
অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন স্যাটেলাইট ও কন্ট্রোল অফিস নির্মাণসহ হুইল ড্রেজার, এক্সাভেটর, ক্রেন, মোবাইল জেনারেটরের মতো ভারী যন্ত্রপাতি ক্রয় ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত ইনস্টিটিউট স্থাপন করবে ।
প্রকল্পটির মোট এক হাজার ৩৮১ কোটি টাকা ব্যয়ের মধ্যে বিশ্বব্যাংক এক হাজার ৩৩২ কোটি টাকা প্রকল্প সাহায্য হিসেবে দেবে।
মন্ত্রী বলেন, সভায় প্রায় ৫২ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৬ সালের মধ্যে সম্পন্ন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান সড়কগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ‘কোল্ড রি-সাইক্লিং প্লান্ট ও ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ’ নামে একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর আওতায় এখন থেকে ঢাকা দক্ষিণের বিভিন্ন রাস্তা মেরামতে পুরোনো নির্মাণসামগ্রী পুনরায় ব্যবহার করা হবে।
বাংলাদেশে সড়ক সংস্কারে একেবারে নতুন এ প্রযুক্তি সম্পর্কে আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতে ঢাকার রাস্তাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে প্রতিবছর সংস্কার ও মেরামতের ফলে রাস্তার উচ্চতা বেড়ে পানিনিষ্কাশনে বাধার সৃষ্টি করছে। কিন্তু কোল্ড রি-সাইক্লিং প্ল্যান্টের মাধ্যমে পুরোনো উপাদানগুলোর ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ পুনরায় ব্যবহার করা যাবে। এতে রাস্তার উচ্চতা বাড়বে না এবং অর্থেরও সাশ্রয় হবে।
সভায় ৯৭ কোটি টাকা ব্যয়ে রেলওয়ের মোট ২৪৯৪টি লেভেল ক্রসিং গেটের মধ্যে ৬৭২টি গেটে ১৮৮৯ জন গেট-কিপার নিয়োগ ও সিগন্যালিং ব্যবস্থা স্থাপনে দুটি পৃথক প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। বাংলাদেশ রেলওয়ে ২০১৭ সালের মধ্যে প্রকল্প দুটি বাস্তবায়ন করবে।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, কক্সবাজার জেলায় উপকূলীয় বাঁধের পুরোনো ২০টি পোল্ডারের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ছয়টি পোল্ডার নতুন করে মেরামতের জন্য ২৬০ কোটি টাকা ব্যয় সাপেক্ষ একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ২০১৭ সালের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে।
সভায় সিলেটসহ এ বিভাগের সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার ৩০ উপজেলায় শস্য নিবিড়তা বাড়াতে মোট ৭৪ কোটি টাকা ব্যয়সাপেক্ষে আরো একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। এ ছাড়া ১৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম জেলার চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া উপজেলার সাঙ্গু ও চাঁদখালী নদীর উভয় তীর সংরক্ষণেও একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়।