বিশ্ব শেয়ারবাজারে বিশাল ধস

গত এক সপ্তাহে শেয়ার বাজারের সূচকের লাগামছাড়া পতনে দিশেহারা এশিয়াসহ বিশ্ব শেয়ার বাজার। তবে আজ সোমবার সারা বিশ্বের শেয়ার বাজারের দরপতন ম্লান করে দিয়েছে গত এক বছরের অর্জনকে। এমনটি জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
সোমবার চীন, জাপান ও ভারতসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ সব শেয়ারবাজারে সূচকের ব্যাপক পতনের পরিপ্রেক্ষিতে দিনটিকে ‘ব্লাক মানডে’ হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে।
সূচক পতনের রেকর্ড শুরু হয়েছিল চীনের সাংহাই স্টক মার্কেট থেকে। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে দরপতন শুরু হলেও সোমবারের বিশাল ধ্স প্রায় সর্বস্বান্ত করে দিয়েছে শেয়ার বাজারের ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের।
বিজনেস ইনসাইডারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সোমবার চীনের শেয়ারবাজারের সূচক ৯ শতাংশ নেমে আসে। চীনে দ্রুত শেয়ারের পতনের সঙ্গে ডলারের দামে নেতিবাচক প্রভাব পড়ায় ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন বড় বিনিয়োগকারীরা। গত জুন মাস থেকে চীনের শেয়ারবাজার সব মিলিয়ে ৩০ শতাংশের মতো সূচক হারিয়েছে।
চীনের শেয়ারবাজার ধসের প্রভাব পড়েছে সারা বিশ্বে। ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ভারতসহ বিশ্বের প্রায় সব বড় শেয়ারবাজারেই দরপতন হয়েছে। একে ইতিহাসের অন্যতম বড় শেয়ারবাজার ধস বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
শুধু বিশ্বের শেয়ারবাজারই নয় সোমবার পণ্য বাজারেও সবচেয়ে খারাপ অবস্থা দেখা গেছে। দরপতনের এই হিড়িকে বিশ্বব্যাপী তেলের দাম কমেছে ৪ শতাংশ। ১৯৯৯ সালের পর এই প্রথম সর্বনিম্ন দামে পৌঁছেছে অপরিশোধিত তেলের দাম। এর প্রভাব পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানির ঋণপত্রেও।
গত সপ্তাহের পুরোটাজুড়েই এশিয়ার বাজারে দরপতন অব্যাহত ছিল।
এশিয়ার বাইরে আন্তর্জাতিক বাজারে দরপতনের প্রথম ধাক্কাটি লাগে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ওয়াল স্ট্রিটে অবস্থিত নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জে, গত শুক্রবার।
আর অজানা শংকায় শেয়ার বিক্রির যে হিড়িক পড়ে, তার রাশ আর টেনে ধরা যায়নি। এর ফলে স্থানীয় সময় সোমবার দিনের শুরুতে ওয়াল স্ট্রিটের স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুর ফাইভ হান্ড্রেড ইনডেক্স সাড়ে পাঁচ শতাংশ দরপতনের রেকর্ড করে, যা চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, ওয়াল স্ট্রিটে সূচক ১৬ হাজার পয়েন্টের নিচে নেমে গেছে। ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের পর এতটা পতন দেখল এ শেয়ারবাজার।
ভারতের সেনসেক্সও সূচকের উল্লেখযোগ্য পতন হয়েছে। সোমবার বাজারে সূচকের পতন ঘটে এক হাজার ৬২৫ পয়েন্ট। দিনের শেষে ২৫ হাজার ৭৪২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে মূল্যসূচক। নিফটিতেও ৪৯১ পয়েন্টের পতন ঘটেছে। বলা হচ্ছে, সূচকের এ পতন ভারতীয় স্টক মার্কেটের ইতিহাসে সবচেয়ে বড়। সেই সঙ্গে রূপির দামও পড়ে গেছে। ডলার প্রতি রূপির মান এখন ৬৭, যা আগে ছিল ৬৪।
দেশটির সংবাদমাধ্যমগুলোর তথ্য অনুযায়ী, তেল ও গ্যাস, ব্যাংক শেয়ার, অটোমোবাইল, ধাতব শিল্প, পণ্য ও আইটিসহ প্রায় সব সেক্টরের শেয়ারে সূচকের পতন দেখা গেছে সোমবার।
জাপানেও সূচকের পতন হয়েছে। নিক্কেইয়ে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ নিচে নেমে গেছে সূচক। গত আড়াই বছরে দেশটির স্টক মার্কেটে এটাই সবচেয়ে বড় পতন।
এশিয়ার মতো ইউরোপের স্টক মার্কেটগুলোও সূচকের পতন দেখেছে। যুক্তরাজ্যের এফটিএসইতে সূচকের পতন হয়েছে ২ দশমিক ৫৪ শতাংশ, পয়েন্টের হিসাবে যা আগের চেয়ে ১০০ নিচে। সিএসি ও ডিএএক্সেও একই অবস্থা।
আজ পুরোদিনেই জার্মানির ডিএএক্স সূচকে টানা পতন হয়েছে। আর লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে এফটিএসই ১০০ সূচকে কোনো কোম্পানির দামই বাড়েনি।
এ ছাড়া শেনজেন ও হংকং শেয়ারবাজারেও সূচকের পতন ঘটেছে উল্লেখযোগ্য হারে। অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়াসহ আরো বেশ কয়েকটি দেশের সূচকে উল্লেখযোগ্য পতন হয় এই দিন।
বিশ্ব শেয়ারবাজারের ধস প্রসঙ্গে নেদারল্যান্ডসের ব্যাংক এবিএন আমরার প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা দিদিয়ের দোউরেত বলেন, চীনের মাধ্যমে এই ভীতির সঞ্চার হয়েছে। দেশটিতে বিনিয়োগবান্ধব মুদ্রানীতি প্রণয়ন না হলে এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়।
রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত সপ্তাহে চীনের শেয়ার বাজারে সূচক ১১ শতাংশ কমলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ভীতি বাড়তে থাকে। অনেকে বিনিয়োগ রক্ষা করতে শেয়ার বিক্রি বাড়িয়ে দেন।
ডলার শক্তিশালী করতে গিয়ে ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার বাড়ানোতে চীনের বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে মনে করেন অনেক বিশেষজ্ঞ। ফলে পুঁজিবাজারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মুদ্রা ও পণ্যের বাজারেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে দেশটির মুদ্রা উয়ানের অবমূল্যায়নের। চীনের চাহিদার ওপরে নির্ভরশীল অর্থনীতি ও মুদ্রাগুলো এখন লোকসানের মুখে। আর তাই বিনিয়োগকারী থেকে বিশ্লেষক, সবাই এখন তাকিয়ে চীনের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে।