বাণিজ্য মেলা
কয়েদিদের বানানো শৈল্পিক পণ্যের পসরা

বাণিজ্যমেলার ভেতরে ঢুকে একটু বা দিকে গেলেই চোখে পড়বে ৩ নম্বর প্যাভিলিয়ন। মোটামুটি মাঝারি আকৃতির এ প্যাভিলিয়নের ওপরে লেখা রয়েছে ‘কারাপণ্য’।
ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখা মিলবে বেত ও বাঁশের তৈরি মোড়া, কাঠের তৈরি আসবাবপত্র, কাপড়, সুতা ও উল দিয়ে বানানো শতরঞ্জি, পাপোশ, চাদর, ওড়না, গামছাসহ ঘরে ব্যবহার করার মতো নানা জিনিস। থরেথরে সাজানো রয়েছে ছোটবড় বিভিন্ন ধরেনর কারুপণ্যও। প্রতিটি পণ্যের গায়েই মূল্য লেখা রয়েছে।
মূল্যের পাশাপাশি কোনোটার গায়ে লেখা রয়েছে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তৈরি, কোনটার গায়ে লেখা রয়েছে রাজশাহী কারাগারে তৈরি, কোনোটার গায়ে আবার লেখা রংপুর কারাগার। এ প্যাভিলিয়নের প্রতিটি পণ্যই কারাগারের ভেতরে তৈরি। আর এগুলো সাজাপ্রাপ্ত কয়েদিরা তৈরি করেছেন। প্রতিটি পণ্যেই যেন কয়েদিদের নিখুঁত হাতের যত্নের ছোঁয়া রয়েছে।
শো-রুমের ভেতরে কারা অধিদপ্তরের ১৪ থেকে ১৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। ক্রেতাদের পছন্দের পণ্যগুলোকে বেশ যত্নের সঙ্গেই তারা উপস্থাপন করছেন। সেই সঙ্গে নানা কৌতূহল আর প্রশ্নের জবাবও তারা দিয়ে চলেছেন ধৈর্যের সঙ্গে।
পুরান ঢাকা থেকে মেলায় এসেছেন ষাটোর্ধ বয়সের আশিকুল ইসলাম। তিন নম্বর প্যাভিলিয়নের ভেতরে ঢুকে একটু ঘোরাফেরা করে উত্তর-পশ্চিম কোনে সাজিয়ে রাখা সিংহাসন চেয়ারে বসলেন। বেত ও বাঁশের ফালি ব্যবহার করে তৈরি করা বৈচিত্র্যময় এ চেয়ারটি যেনে নবাবী আমলের ঐতিহ্যকে প্রকাশ করছে। প্যাভিলিয়নের কর্মীরা যত্নের সঙ্গে চেয়ারটির নানা দিক তার কাছে তুলে ধরলেন।
পণ্যের ব্যাপারে প্যাভিলিয়নের একজন কর্মী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘কারাগারে বিভিন্ন মেয়াদের সশ্রম কারাদণ্ডপ্রাপ্ত কয়েদিরাই এসব পণ্যের কারিগর। এসব পণ্যের মাধ্যমে তারা তাদের মনের শিল্পসত্ত্বার পরিচয় ফুটিয়ে তুলে ধরার চেষ্টা করেন।’
পণ্যের দামের ব্যাপারে ওই কর্মী বলেন, ‘আমাদের সব পণ্যই হাতের তৈরি। দেশীয় কাঁচামাল দিয়ে বানানো। এ কারণেই দাম একটু বেশি। তবে বেচাকেনা অন্যদের তুলনায় একবারে খারাপ নয়। অনেকেই আসেন দেখেন ও কিছু না কিছু একটা কিনে নেন।’
কোনো ধরনের ক্রেতা বেশি আসেন, জানতে চাইলে ওই কর্মী বলেন, ‘বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষই আসেন। অনেক ছাত্রছাত্রীও আসেন। তবে ক্রেতাদের কাউকে কখনোই বিরক্তি প্রকাশ করতে দেখিনি। আমাদের পণ্যের গুণগত মান ভালো। তাই একবার যারা কিছু নিয়েছেন, তারা পুনরায় আসছেন এখানে।’
কোনো রকম প্রচার ছাড়াই কারাগারে প্রস্তুত করা পণ্য ক্রেতাদের ভালো লাগছে বলে মেলায় আসাটা স্বার্থক হয়েছে বলে জানান বিক্রেতারা।