যানজটে বছরে ক্ষতি ৩০০ কোটি টাকা

যানজটের ফলে রাজধানীর এক কোটি ৬০ লাখ মানুষের দৈনিক দুই কোটি ৪০ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। ফলে বছরে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। এর ফলে রাজধানীর ৭৩ ভাগ মানুষ শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির শিকার হচ্ছে।
গতকাল রোববার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের (আইইবি) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ আয়োজিত সেমিনারে এসব তথ্য উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধে ড. মিজান বলেন, ‘রাজধানীর প্রত্যেক মানুষের দুই ঘণ্টা ৩৫ মিনিটের মধ্যে গড়ে এক ঘণ্টা ৩০ মিনিট সময়ই যানজটে আটকে থাকতে হয়।’
বার্তা সংস্থা বাসস জানায়, আইইবির সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান আলী মাসুদ হায়দারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন। সেমিনারে আরো বক্তৃতা করেন আইইবির প্রেসিডেন্ট কবির আহমেদ ভূঁইয়া, সাধারণ সম্পাদক আবদুস সবুর ও ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) খন্দকার গোলাম ফারুক।
গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, রাজধানীর যানজটের অন্যতম কারণ হলো অবৈধ পার্কিং এবং বহুতল ভবনের কার পার্কিংগুলো ভিন্ন কাজে ব্যবহার করা। এরই মধ্যে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এসব ভবনের কার পার্কিংগুলো থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং আবাসিক ভবনের বাণিজ্যিক ব্যবহার বন্ধে কার্যক্রম শুরু করেছে। এটা করা হলে রাজধানীর যানজট কিছুটা হলেও কমবে।
যানজট নিরসনের জন্য রিক্শা উচ্ছেদের পরামর্শ দিয়ে মন্ত্রী বলেন, অন্তত অবৈধ রিকশাগুলোর চলাচল দ্রুত বন্ধ করতে হবে।
মেয়র আনিসুল হক যানজট নিরসনে তাঁর নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগ তুলে ধরে বলেন, এরই মধ্যে নয়টি স্থানকে তিনি যানজটমুক্ত করেছেন। গাজীপুর থেকে তেজগাঁও সাতরাস্তা পর্যন্ত ইউ-লুপ স্থাপনের কাজও শুরু হয়েছে। এ ছাড়া সিসি ক্যামেরা বসানোর কাজও শুরু হয়েছে। এসব সিসি ক্যামেরাকে পুলিশের কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে সংযুক্ত করে দেওয়া হবে। ট্রাফিক পুলিশ সিসি ক্যামেরার ছবি দেখে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।
মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, রাজধানীর যানজট নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ ও মফস্বল পর্যায়ে নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। চট্টগ্রামসহ বড় শহরগুলোতে কয়েকটি মন্ত্রণালয় স্থানান্তর করা যেতে পরে।
মূল প্রবন্ধে অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান রাজধানীর সেবা সংস্থাগুলোর কাজের সমন্বয়হীনতা, ট্রাফিক আইন না মানা, পর্যাপ্ত সড়ক না থাকা, রাস্তা দখল, রাস্তায় পার্কিংসহ প্রভৃতি সমস্যার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ঢাকা শহরকে বাসযোগ্য করতে হলে নাগরিকদের সচেতন হওয়াসহ স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।