রপ্তানি বেড়েছে, প্রয়োজন পণ্যের বহুমুখীকরণ

চলতি অর্থবছরের (২০১৫-১৬) প্রথম ছয় মাসে পণ্য রপ্তানি হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। তবে কতিপয় পণ্যের প্রবৃদ্ধির ওপর ভর দিয়ে এই লক্ষ্যপূরণ হয়েছে। এ জন্য পণ্যের বহুমুখীকরণের মাধ্যমে নতুন রপ্তানির বাজার সৃষ্টি করতে হবে। আর প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, শিল্পে গ্যাস সরবরাহ, অবকাঠামো উন্নয়ন ও বিদেশি বিনিয়োগ আনা জরুরি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
গত অর্থবছরে (২০১৪-১৫) দেশের রপ্তানি খাতের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল এক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন। তবুও চলতি অর্থবছরের জন্য বড় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এ ক্ষেত্রে চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে রপ্তানি হয় এক হাজার ৬০৮ কোটি ডলারের পণ্য। এটি ছিল লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। এই ছয় মাসে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘ক্রেতারা যেভাবে আমাদের বলছে, আমরা সেভাবে কারখানাগুলোকে বিশ্বমানের করছি। এখন রাজনৈতিক সহিংসতা নেই। রাজনৈতিক অবস্থা এখন ভালো। এ জন্য ক্রেতাদের আশা বেড়েছে।’
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘উত্তরোত্তর রপ্তানি পণ্য কাঠামোতে প্রবৃদ্ধির যে ধারা, সেটি কিন্তু কতিপয় পণ্যের প্রবৃদ্ধির ওপর নির্ভর করছে। গত ছয় মাসের তথ্যে দেখা যায়, প্রায় ৪৬ শতাংশ পণ্যে একই সময়ে কিন্তু ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি ছিল। সুতরাং সেটাও কিন্তু একটা দুশ্চিন্তার দিক।’
চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে মোট রপ্তানির বেশির ভাগই এসেছে তৈরি পোশাক খাত থেকে। এ সময়ে নিট ও ওভেন মিলিয়ে তৈরি পোশাক খাতের পণ্য রপ্তানি হয় এক হাজার ৩১৩ কোটি ডলার। এটি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। তবে রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে পারেনি পাট ও পাটজাত পণ্য। একই অবস্থা চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতেও। ভবিষ্যতে এসব খাতে বিশেষ নজর দেওয়ার পাশাপাশি খাতভিত্তিক নীতি সংস্কারের তাগিদ বিশেষজ্ঞ ও ব্যবসায়ী নেতাদের।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘সরকারের কাছে একটি জ্বালানি নীতি চাই। শিল্পে গ্যাস দিতে হবে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন দরকার, বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো দরকার—এগুলো পরিকল্পনামতো যদি না এগোয়, তখনই দেখা যাবে আমাদের একটি সমস্যা দেখা যাবে।’
ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘এ মুহূর্তে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি ভালো হলেও গ্যাস বা জমির স্বল্পতায় অনেক খাত সমস্যার মধ্যে রয়েছে। সেদিক থেকে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল যেটি হওয়ার কথা, সেটি দ্রুত বাস্তবায়ন শেষ করতে হবে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, আমাদের বোধ হয় বড় রকমের উদ্যোগ নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে; সেটি হলো বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করা। সেটা চিন্তা করতে হবে বিভিন্ন সম্ভাবনাময় খাতের উপ-খাতেও।’
পণ্যের বহুমুখীকরণের মাধ্যমে নতুন রপ্তানি বাজার তৈরির পরামর্শ দেন মোয়াজ্জেম।