ক্ষুধা নির্মূলে সামাজিক ব্যবসার প্রসারে এফএওর সম্মেলন

বিশ্বব্যাপী ক্ষুধাকে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে সামাজিক ব্যবসা বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)। এ জন্য বিশ্বের খাদ্যশিল্পের শীর্ষস্থানীয় কর্তাব্যক্তিদের একত্র করতে সম্প্রতি ইতালির রোমে ‘সোশ্যাল বিজনেস ফর হাঙ্গার’ শীর্ষক বিশেষ সম্মেলন আয়োজন করে সংস্থাটি। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
সম্মেলনে এফএওর মহাপরিচালক হোসে গ্রাজিয়ানো তাঁর বক্তব্যে ক্ষুধা নির্মূলে সামাজিক ব্যবসা কী ভূমিকা পালন করতে পারে, তার ওপর আলোকপাত করেন।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্মেলনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, সামনের বছরগুলোতে খাদ্য নিরাপত্তা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হতে যাচ্ছে। সবার জন্য খাদ্য নিশ্চিত করাই শুধু নয়, সবার জন্য পর্যাপ্ত পুষ্টি নিশ্চিত করাও গুরুত্বপূর্ণ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে ও খাদ্য কোম্পানিগুলোর সহযোগিতায় গ্রামের তরুণ-তরুণীদের উদ্যোক্তায় রূপান্তরিত করার উপায় খুঁজে বের করতে হবে। সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে গ্রামের অর্থনীতিকে কৃষিভিত্তিক অর্থনীতিতে রূপান্তরের মাধ্যমে তরুণদের বহির্গমন কমিয়ে আনা ও একেবারে বন্ধ করা যেতে পারে।
ইতালির কৃষিমন্ত্রী মৌরিজিও মারতিনা, ইতালিয়ান পার্লামেন্টের চেম্বার অব ডেপুটিজের ভাইস প্রেসিডেন্ট মারিয়া সেরেনি ও ইতালিয়ান কৃষক ফেডারেশনের সভাপতি দিনো স্কানাভিনো সম্মেলনে বক্তৃব্য দেন। তাঁরা বিশ্ব থেকে ক্ষুধা নির্মূল করতে সামাজিক ব্যবসার ভূমিকা নিয়ে বক্তব্য রাখেন। উদ্বোধনী সেশনের পর সামাজিক ব্যবসার ওপর উচ্চ পর্যায়ের প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রথম প্যানেলটি ছিল সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে ক্ষুধাকে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে খাদ্যশিল্পের ভূমিকাবিষয়ক। এই প্যানেলে ছিলেন ইতালির নেতৃস্থানীয় খাদ্য কোম্পানি ফেররেরোর প্রেসিডেন্ট, ম্যাককেইন ইউরোপের প্রধান নির্বাহী, মার্স কোম্পানির ঊর্ধ্বতন উপদেষ্টা ও ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্যানেলটি সঞ্চালনা করেন এফএওর ডিরেক্টর অব পার্টনারশিপ মার্সেলা ভিল্লারিয়াল।
দ্বিতীয় প্যানেলটির বিষয়বস্তু ছিল শূন্য ক্ষুধার লক্ষ্য অর্জনে সামাজিক ব্যবসাকে এগিয়ে নিতে ব্যাংকগুলো কোন ধরনের ভূমিকা পালন করতে পারে। এই প্যানেলে বক্তব্য রাখেন মাস্টারকার্ড, নেদারল্যান্ডসের রাবোব্যাংক, গ্রামীণ ক্রেডিট অ্যাগ্রিকোল ও ইউরোপের কয়েকটির ব্যাংকের শীর্ষস্থানীয় নির্বাহীরা। ড. ইউনূস ক্ষুধা ও অপুষ্টি মোকাবিলায় সামাজিক ব্যবসার সঙ্গে এরই মধ্যে যুক্ত বিভিন্ন কোম্পানির উদাহরণ তুলে ধরেন।
পরে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন আইন সংস্থার (আইডিএলও) মহাসচিব আইরিন খান ড. ইউনূসের সম্মানে একটি অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। যেখানে যোগ দেন ইতালিয়ান সিনেট ফরেন রিলেশনস কমিটির চেয়ারম্যান ও ইতালি সরকারের পররাষ্ট্রবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি অব স্টেট। অনুষ্ঠানে দরিদ্র মানুষের প্রয়োজন সামনে রেখে বিশ্বব্যাপী আইনের পরিবর্তনের গুরুত্ব নিয়ে ড. ইউনূস বক্তব্য দেন।