তৈরি পোশাক উৎপাদন সক্ষমতায় পিছিয়ে বাংলাদেশ

তৈরি পোশাকশিল্প রপ্তানি আয়ে বড় অবদান রাখছে। তবে দেশের বেশির ভাগ পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠান উৎপাদনসক্ষমতায় ভারত, পাকিস্তানসহ এশিয়ার অনেক দেশের চেয়ে কম বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, শ্রমিকদের দক্ষতার অভাবের পাশাপাশি উন্নত প্রযুক্তির যন্ত্র ব্যবহার না হওয়ার কারণে উচ্চমান ও মূল্যের পণ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ পিছিয়ে থাকছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের দিকে উদ্যোক্তারা ঝুঁকছেন। এতে দেশের পোশাকশিল্পের উৎপাদনশীলতা আগামীতে বাড়বে।
চলতি অর্থবছরের (২০১৫-১৬) প্রথম ১০ মাসে বাংলাদেশ মোট যে রপ্তানি আয় করেছে, তার ৮০ শতাংশেরও বেশি এসেছে তৈরি পোশাকশিল্প থেকে। বিশ্বে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে চীন প্রথম ও বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। তবে সস্তা পণ্য ও বড় শ্রমবাজারকে পুঁজি করে দেশের এই শিল্প খাত এগিয়েছে। এ ক্ষেত্রে শ্রমিকদের দক্ষতা, আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার ও উচ্চমূল্যের পণ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ এখনো বেশ পিছিয়ে আছে।
উৎপাদন দক্ষতায় পিছিয়ে থাকার বিষয়ে বিজিএমইএর সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘আমাদের দেশে একটা পণ্য উৎপাদন করতে গেলে আমাদের যে মেশিন থাকে, সে ক্ষেত্রে ম্যান মেশিন (শ্রমিক) রেশিওটা আমাদের এখানে অনেক বেশি। এ কারণে যখন আমাদের মোট দক্ষতা হিসাব করা হয়, তখন তেমন ভালো ফল আসে না।’
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘একটা বড় সমস্যা হচ্ছে বাংলাদেশের কারখানাগুলোর মধ্যে বড়গুলো যেভাবে শ্রমিকদের বা উৎপাদনশীলতার ব্যাপারে যত্নবান, ছোট বা মাঝারি কারখানায় সেভাবে দেখা হয় না। উপরন্তু উৎপাদনশীলতার ব্যাপারে এক ধরনের সনাতনী মনোভাব রয়েছে উদ্যোক্তাদের মধ্যে।’
এক গবেষণায় দেখা যায়, তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতার ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে চীন। তবে বাংলাদেশের অবস্থান ভারত, পাকিস্তানেরও পরে। এ ছাড়া শিল্পে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহারের দিক দিয়ে পাকিস্তানসহ অনেক দেশই বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে আছে।
উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারে পিছিয়ে থাকার বিষয়ে সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘ওভেনে বা নিটে আমরা বর্তমানে উন্নত প্রযুক্তির যন্ত্র ব্যবহার শুরু করেছি। ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের দিকে অনেকটাই নজর দেওয়া হচ্ছে। অনেক কারখানাতেই এখন ইন্ডাস্ট্রিয়াল টিম আছে।’
ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘উচ্চমানের পণ্য উৎপাদনে যাওয়া, কমপ্লায়ান্স উন্নত করা, ভালো ব্যবস্থাপনা করা ও শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া গেলে পোশাকশিল্প খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর পণ্য উৎপাদনশীলতা বাড়বে বলে মনে করি।’
তৈরি পোশাকশিল্পের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে, শ্রমিকদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য উন্নয়নের তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।