প্রকল্পের অগ্রগতি নেই, তবু ব্যয় বাড়ল

নাটোরের লালপুরে নর্থ বেঙ্গল চিনিকলে কো-অপারেশন পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সুগার রিফাইনারি স্থাপন প্রকল্পের গত দুই বছরে কাজের অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ২ দশমিক ৫৩ শতাংশ। কাজের তেমন অগ্রগতি না হলেও প্রকল্পটির মূল ব্যয় ২৫০ কোটি ৭১ লাখ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এর আগে ব্যয় ধরা হয় ৭৩ কোটি ৪৭ লাখ টাকা, যা এখন ৩২৪ কোটি ১৮ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময়ও দুই বছর বাড়ানো হয়েছে।
ব্যয় ও সময় বাড়িয়ে সংশোধিত প্রকল্পটির অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা।
রাজধানীর শেরে বাংলানগরে আজ মঙ্গলবার পরিকল্পনা কমিশনের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সম্মেলন কক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
একনেক সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রকল্পগুলো সম্পর্কে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আজকের একনেক সভায় পাঁচটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে দুটি নতুন ও তিনটি সংশোধিত প্রকল্প। এগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ৪৫৪ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ২ হাজার ৩৫৯ কোটি ৩১ লাখ টাকা ও সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ৯৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।
নর্থ বেঙ্গল চিনিকল প্রকল্পটির ব্যয় ও সময় বাড়ানো সম্পর্কে পরিকল্পনামন্ত্রী, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আগে কিছু কিছু যন্ত্রণাংশ পরিবর্তন করায় কাজের অগ্রগতি কম হয়েছে। এবার আমরা আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সব কাজ এক সঙ্গে করব। তাই আশা করছি, ২০১৮ সালের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, নর্থ বেঙ্গল চিনিকলের চলমান প্রকল্পের সঙ্গে ডিস্টিলারি, বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট ও বায়োকম্পোস্ট প্ল্যান্ট স্থাপনের কারণে প্রকল্পের কলেবর বৃদ্ধি, প্রকল্পের আওতায় নতুন যন্ত্রপাতি ও পূর্ত কাজ সংযোজন, পূর্ত কাজে গণপূর্ত অধিদপ্তরের ২০১৪ সালের রেট শিডিউল অনুসরণ, যন্ত্রপাতি সংগ্রহ ও স্থাপন ব্যয় বৃদ্ধি ও প্রকল্পে মেয়াদকাল বৃদ্ধি করা হয়েছে।
মুস্তফা কামাল আরো বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে যন্ত্রপাতি আধুনিকীকরণের মাধ্যমে প্রসেস লস হ্রাস করে চিনি উৎপাদনের হার বৃদ্ধি পাবে। সুগার মিলের প্রেস মাড ও ডিস্টিলারির বর্জ্য ব্যবহার করে বায়োকম্পোস্ট উৎপাদনপূর্বক পরিবেশ দূষণ রোধ ও জমির উর্বরতা বৃদ্ধি করা যাবে। কো-জেনারেশনের মাধ্যমে চিনিকলের বিদ্যুৎ খরচ সাশ্রয় ও সাদা চিনি, অ্যালকোহল ও বায়োকম্পোস্ট (জৈবসার) বিক্রি করে অতিরিক্ত রাজস্ব আয় করা সম্ভব হবে। এতে মিলটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে এবং মিলটিতে নতুন কর্মসংস্থানসহ স্থানীয় জনসাধারণের খণ্ডকালীন ও অস্থায়ী কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে—যা দারিদ্র্য বিমোচনে ভূমিকা রাখবে।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি) কর্তৃক প্রণীত নর্থ বেঙ্গল চিনিকলে কো-জেনারেশন পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সুগার রিফাইনারি স্থাপন শীর্ষক প্রকল্পটি ২০১৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি একনেক সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয় ৭৩ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। বাস্তবায়ন মেয়াদ ছিল ২০১৪ সালে ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৬ সালে ডিসেম্বর পর্যন্ত। ২০১৬ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি ছিল এক কোটি ৮৬ লাখ টাকা। এটি অনুমোদিত প্রাক্কলিত ব্যয়ের ২ দশমিক ৫৩ শতাংশ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নতুন বিদ্যুৎ সংযোগের মাধ্যমে নর্থ বেঙ্গল চিনিকলে বছরে ৯০ লাখ লিটার মদ উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছে বিএসএফআইসি। এসব মদ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে প্রায় শতকোটি টাকা আয় করা হবে।
এ ছাড়া চিনিকলের বিদ্যুৎ খরচ সাশ্রয় করে বছরে ৪০ হাজার টন সাদা চিনি ও জৈব সার (বায়োকম্পোস্ট) বিক্রি করে অতিরিক্ত রাজস্ব আয় করা হবে।
চিনিকলে নতুন করে ডিস্টিলারি স্থাপন করে চিটাগুড় থেকেই বিভিন্ন ধরনের অ্যালকোহল উৎপাদন করা হবে।
আজকের একনেক সভায় অনুমোদিত অন্য প্রকল্পগুলো হচ্ছে- ওয়েস্ট জোন এলাকায় বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ ও আপগ্রেডেশন প্রকল্প, এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ২৭৮ কোটি ২০ লাখ টাকা।
থ্রিজি প্রযুক্তি চালুকরণ ও ২ দশমিক ৫ জি নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ (ফেজ-২) প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৭৫ কোটি ৮১ লাখ টাকা।
বানিয়াচং-আজমিরিগঞ্জ সড়ক নির্মাণ প্রকল্প (প্রথম সংশোধিত)। এর ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৬ কোটি টাকা।
টেকনাফ-রামু-গ্যারিসন-মরিচ্যা-পালং সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্প (প্রথম সংশোধিত)। এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৬০ কোটি ৪৯ লাখ টাকা।
সংবাদ ব্রিফিংয়ের সময় উপস্থিত ছিলেন সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. শামসুল আলম, আইএমডির সচিব ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী প্রমুখ।