পাটের আবাদে আশাবাদী ভৈরবের চাষিরা

কাঁচা পাটের বাজারদর গত বছর থেকে ঊর্ধ্বমুখী। বেশি দামের আশায় আবাদ বাড়িয়ে চলতি বছর সাফল্য পাওয়া গেছে। এতে পাট আবাদে আরো আশাবাদী হয়ে উঠেছেন কিশোরগঞ্জের ভৈরবের কৃষকরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বছর আকস্মিকভাবে কাঁচা পাটের মণ ৫০০-৬০০ থেকে বেড়ে এক হাজার ৩০০ থেকে এক হাজার ৪০০ টাকা করে বিক্রি হয়। এর পর গত বছরের শেষ দিকে ‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন, ২০১০’ বাস্তবায়নে উদ্যোগী হয় সরকার।
ধান, চাল, গম, ভুট্টা, সার ও চিনি—এ ছয়টি পণ্য সরবরাহে পাটের বস্তা ব্যবহারে বাধ্যবাধকতা আরোপ করে সরকার। এ আইন পরিপালনে অভিযানও পরিচালনা করা হয়। এতে দুই হাজার ৪০০ থেকে দুই হাজার ৫০০ টাকা করে কাঁচা পাট বিক্রি হয়। তবে কৃষকের কাছে পাট না থাকায় তখন ওই মুনাফা ঘরে তোলেন আড়তদাররা। তখন থেকেই পাট আবাদ বাড়ানোর পরিকল্পনা করেন কৃষকরা।
বিভিন্ন এলাকার কয়েকজন কৃষক জানান, চলতি মৌসুমের প্রথম দিকে এক হাজার ৭০০ থেকে এক হাজার ৮০০ টাকা দরে প্রতি মণ পাট বিক্রি করছেন তাঁরা। এ দাম অব্যাহত থাকলে আগামীতে তাঁরা পাটের আবাদ বাড়াবেন।
কয়েকজন কৃষক জানান, কাঁচা পাটের বাজারদর ভালো থাকায় চলতি বছর থেকে অনেকেই পাটের ব্যবসায় নেমেছেন। তাঁরা গ্রামে গ্রামে ঘুরে কৃষকদের বাড়ি থেকেই নগদ টাকায় পাট সংগ্রহ করছেন।
পাট ব্যবসায়ী শফিক ও কাঞ্চন মিয়া জানান, চলতি বছর কৃষকের কাছ থেকে পাট কিনে ভালো মুনাফায় বিভিন্ন আড়তে বিক্রি করছেন তাঁরা। মৌসুমের শুরুতে এক হাজার ৭০০ থেকে এক হাজার ৮০০ টাকা করে পাট কিনে এক হাজার ৮৫০ থেকে এক হাজার ৯০০ টাকা দরে প্রতি মণ পাট তাঁরা বিক্রি করছেন। পাটের দাম আরো বাড়লে তাঁদের মুনাফাও বাড়বে।
ব্যবসায়ী নাজির হোসেন ও ফজলু শেখ জানান, তাঁরা কৃষকের কাছ থেকে পাট কিনে গুদামজাত করছেন। গত মৌসুমের শেষ দিকের মতো এবারও পাটের দর আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত গড়াবে বলে মনে করছেন তাঁরা।
কাঁচা পাট বেচাকেনায় ভৈরবের পাইকারি আড়তগুলোও এখন বেশ সরগরম। পাট কেনা, গুদামজাত করা, আবার পরিবহনে করে সেই পাট তাদের নির্দিষ্ট কারখানা ও পাইকারদের কাছে পাঠানোর কাজে বিরামহীন ব্যস্ততা ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের।
পাইকারি আড়তদার বাদল মিয়া, হাবিবুর রহমান ও ওয়াদুদ ভূঁইয়া জানান, তাঁরা বর্তমানে কাঁচা পাট মানভেদে প্রতি মণ এক হাজার ৯০০ থেকে দুই হাজার টাকা করে কিনছেন।
ভৈরব কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ছয়টি পণ্যে পাটের বস্তার ব্যবহার বাধ্যতামূলক হওয়ায় পাটের আবাদ বেড়েছে। চলতি মৌসুমে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ৫৮০ হেক্টর থাকলেও আবাদ হয়েছে ৬৩০ হেক্টর জমিতে। গত বছর আবাদ ছিল ৫৮০ হেক্টর। আর আগের বছর হয়েছিল ৪৫০ হেক্টর।
বর্তমান সরকারকে পাটবান্ধব আখ্যা দিয়ে ভৈরব উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জালাল উদ্দিন প্রধান জানান, সরকারের সিদ্ধান্তে পাটের বস্তার ব্যবহার বাড়ছে। পাটের বাজারদর ভালো থাকায় কৃষক চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, সার-বীজ ইত্যাদি বিতরণসহ নানাভাবে কৃষকদের সহায়তা করা হচ্ছে।
ভৈরব উপজেলা পাট অধিদপ্তরের কর্মকর্তা আবদুল হান্নান জানান, পাট চাষের জমি তৈরি, বীজ ছিটানো, পাটের জমি নিড়ানো, সার প্রয়োগ, পাট কাটা, জাগ দেওয়া, আঁশ ছাড়ানোসহ পাটবীজ উৎপাদন, সংগ্রহ ও সংরক্ষণ বিষয়ে তাঁর অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেওয়া হয় নিয়মিতভাবে। এ ছাড়া উন্নতজাতের পাটবীজসহ বিভিন্ন প্রকার সার বিনামূল্যে বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত আছে।