জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশের পদক্ষেপ প্রশংসনীয় : বার্নিকাট

মাত্রারিক্ত মৎস্য আহরণ, সমুদ্রদূষণ এবং বৈশ্বিক জালবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশের কার্যকর পদক্ষেপ প্রশংসার দাবিদার বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া স্টিফেন্স ব্লুম বার্নিকাট।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘ব্লু ইকোনমি : বিনিয়োগের নতুন দিগন্ত’ শীর্ষক সেমিনারে আজ শনিবার এ মন্তব্য করেন রাষ্ট্রদূত।
মার্শিয়া স্টিফেন্স ব্লুম বার্নিকাট বলেন, ‘আমাদের জীবনযাত্রার গতিধারাকে চলমান রাখতে দূষণমুক্ত ও সম্পদশালী সমুদ্র অত্যন্ত অপরিহার্য। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত মৎস্য আহরণ, সমুদ্রদূষণ এবং বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন সমুদ্র অঞ্চলগুলো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। বৈশ্বিক অর্থনীতির ক্রমবর্ধমান উন্নয়ন ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে এ সম্যসার দ্রুত সমাধান জরুরি। মাত্রাতিরিক্ত মৎস্য আহরণ, সমুদ্রদূষণ এবং বৈশ্বিক জালবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পদক্ষেপ প্রশংসনীয়।’
ডিসিসিআই সভাপতি হোসেন খালেদ বলেন, ‘ব্যবসা-বাণিজ্যের ৭০ শতাংশই সমুদ্রে মৎস্য আহরণ, সামুদ্রিক খাদ্য ও বাণিজ্যিক সমুদ্র পরিবহন হতে আসে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় তিন কোটি লোক এতে সম্পৃক্ত।’
হোসেন খালেদ আরো বলেন, ‘নতুন সমুদ্রসীমার যথাযথ ব্যবহারে স্টেকহোল্ডাদের সমন্বয়হীনতা, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, সমুদ্রদূষণ, দক্ষতার অভাব, নিরাপত্তার অপ্রতুলতা ও বন্দরগুলোর অদক্ষতাকে দায়ী করেন। কার্যকর নীতিমালা প্রণয়ন, প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ সাধন, বৈশ্বিক যোগাযোগ বৃদ্ধি জরুরি। ব্লু-ইকোনমি খাতে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা দরকার।’
সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে দেশীয় উদ্যোক্তাদের আহ্বান জানিয়ে ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী তেলের দাম কমে যাওয়ায় নতুন কূপ অনুসন্ধান চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
‘সরকার মিয়ানমার থেকে গ্যাস আমদানির চিন্তা করছে। যার মাধ্যমে চট্টগ্রাম অঞ্চলে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন সম্ভব হবে। এ লক্ষ্যে বেশ কিছু উচ্চ ক্ষমতার কমিটি করা হয়েছে। দেশের সমুদ্রসীমায় জরিপ চালানোর জন্য জার্মানি থেকে একটি নতুন প্রযুক্তি সক্ষম জাহাজ ক্রয় করা হয়েছে।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম বলেন, ‘বর্তমান সরকারের সময়োপযোগী উদ্যোগের ফলে সমুদ্র এলাকায় বিশাল অংশ বাংলাদেশের জলসীমায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। নতুন এ জলসীমার পরিমাণ বাংলাদেশের মোট স্থল অঞ্চলের প্রায় ৮১ শতাংশ। এ ছাড়া ৭৫টির মতো ছোট-বড় দ্বীপ রয়েছে। পর্যটন সম্প্রসারণের পাশাপাশি বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।’
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাওসার আহমেদ।
প্রবন্ধে বলা হয়, ‘২০১৩ সালে বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদের জাহাজের সংখ্যা ছিল ৭২টি। ২০১৫ সালে তা ৩২টিতে নেমেছে। সরকার জাহাজ ভাঙা শিল্প থেকে প্রতিবছর পাঁচ দশমিক ২১ বিলিয়ন টাকার রাজস্ব আদায় করে। এক লাখ দক্ষ শ্রমিকের পাশাপাশি প্রায় দেড় লাখ অর্ধদক্ষ জনশক্তি এ পেশায় নিয়োজিত রয়েছে।’